সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে: বিএনপি

শাহ্জাহান সাজু
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩
গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এ পদযাত্রার আয়োজন করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবিতে এই পদযাত্রার আয়োজন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এ পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো: আবদুস সালাম। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে কাকরাইল মোড় ও শান্তিনগর মোড় হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। একই দাবিতে আজ সারাদেশে মহানগর, জেলা উপজেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো একদফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এই একদফার আন্দোলনের দাবির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথাও আছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম ও লড়াই করছেন। বন্দি অবস্থায় কোন কিছু ঘটলে সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এই উপমহাদেশের শুধু নয়, এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন নেত্রী। খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনো তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।
তার কিছু হলে সরকারকে সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নিতে হবে। আর তার আমলে মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে তার অবদান বলে শেষ হবে না।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতি থেকে এসেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। যেই দুই কোটি টাকার অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে সেই টাকা এখন ৮ কোটি টাকা হয়েছে। একই ধরনের মামলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে শুধু মুক্তি দেয়া হয়নি মামলা তুলে নেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ ঘরে থাকতে পারে না। তাদেরকে পুলিশ হয়রানি করছে। এরা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সবই ধ্বংস করেছে। আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। ইনশাআল্লাহ আগামীতে একটি ভালো নির্বাচন হবে। যেখানে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে। সুতরাং এখনো সময় আছে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবেন না, বাসা বাড়িতে হানা দিবেন না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অবিলম্বে এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। আর খালেদা জিয়া মুক্ত মানেই এই সরকারের পরাজয়। কিন্তু এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা এখানে এসেছি এই সরকারকে বিদায় করার জন্য। এই সরকার যদি ভেবে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা, হামলা এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে রাজনীতি থেকে বিরত রাখতে পারবে। সেটা কোন দিন হবে না। আর জুলুম ও অত্যাচার করে কোন দিন এই অবৈধ সরকার টিকে থাকতে পারে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় জানাবো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা কোনটাই সম্ভব না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে যেমন আমরা আপস করি না। তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারেও আমরা কোন আপস করি না। আমরা তার মুক্তি চাই। কারণ অন্যায়ভাবে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবিলস্বে তাকে সুচিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক এবং তাকে মুক্তি দেয়া হোক। পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং স ালনা করেন উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
চারণ কবির মতো মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন খালেদা জিয়া : বেগম খালেদা জিয়া এই উপমহাদেশের শুধু নয়, এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন নেত্রী জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনো তিনি বন্দী অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার কিছু হলে সরকারকে সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নিতে হবে। তার আমলে মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে তার অবদান বলে শেষ হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতি থেকে এসেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। যেই দুই কোটি টাকার অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে সেই টাকা এখন আট কোটি টাকা হয়েছে। একই ধরনের মামলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তাদের শুধু মুক্তি দেয়া হয়নি, মামলা তুলে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য না কি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। দেখেন আমাদের ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক জিসানসহ ছয়জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের মুক্তি না হলে দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজকে শুধু তারাই নয়, আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ ঘরে থাকতে পারে না। তাদের পুলিশ হয়রানি করছে। এরা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সবই ধ্বংস করেছে। আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। ইনশা আল্লাহ আগামীতে একটি ভালো নির্বাচন হবে। যেখানে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে। এখনো সময় আছে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করবেন না, বাসা বাড়িতে হানা দিবেন না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অবিলম্বে এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ইস্পাত কঠিন মনোবল ধরে রেখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা বাসায় থাকতে পারেন না। এই অনাচার দুরাচার থেকে মুক্ত হতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় ছাড়া উপায় নেই। বিদেশী প্রভুদের দয়ায় কোনো কাজ হবে। দেশের মানুষ রাজপথে নেমেছে। তারা হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে।

এদিকে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা মামলা হামলাবাজ সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে এখানে পদযাত্রা করছি। এদের বিদায় নিতে হবে। তারা আমাদের হামলা মামলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এভাবে কিছুদিন হয়ত টিকে থাকা যায়, তবে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজ হোক কাল হোক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করবো।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হবে না। কদিন আগে একজন বিশিষ্ট আলেম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজা নিয়ে কী করল? হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমাদের নেত্রীর জানাজা আমরা ঠিকমতো দিতে পারব না। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তিনি কোনো অন্যায় করেন নাই। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে করতে এতদূর এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই, এই সংসদের বিলুপ্ত চাই।’
তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ অশান্তি করতে চাইলে তাদের জবাব দেয়া হবে। পুলিশ দেখলে পালানো যাবে না। হাতুরি বাহিনী মাঠে নামলে তাদের হাত পা ভেঙে দেয়ার অধিকার আমাদের আছে। আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। অনেকে প্রাণ দিয়েছে। অনেকে জেলখানায় গেছেন। সবকিছুর হিসেব নেয়া হবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে। হাসিনার পতন মানে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এখনো আপোসহীন আন্দোলন করছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কোনো আপোস নাই। তাকে সুচিকিৎসা না দিয়ে আরো ব্যাধিগ্রস্ত করা হয়েছে। বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। আমরা তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি করছি। বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে হবে। এটা চিরদিন চলতে পারে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বিচারিক আইন উপেক্ষা করে সাংবিধানিক আইন উপেক্ষা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধু মানুষের ভোটাধিকার লুটে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আজকে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবে। দেশে এখন আওয়ামী বিচার লীগ নামে একটি সংগঠন হয়েছে। এটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও জনগণ কিন্তু বুঝে গেছে। এরা কিভাবে ন্যায় বিচার করবে! এরা তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় চলে আসবে। কেউ রেহাই পাবেন না। ইনশা আল্লাহ দেশে শুভদিন আসছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com