বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি চাপ্রেমী আছেন, যাদের দিন শুরু হয় গরম গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো চা। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী চা, তবে কোন ধরনের চা পান করছেন তার উপরই কিন্তু নির্ভর করে সেটি পানে উপকার মিলছে নাকি অপকার।
এদেশের বেশিরভাগ মানুষই চিনি মিশ্রিত দুধ চা বা রং চায়ের প্রতি আসক্ত। আর দুধ বা চিনি মিশ্রিত চা কখনো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। যদিও দিনে একবার পছন্দের এক কাপ চায়ে চুমুক দিলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই, তবে এর অত্যধিক সেবন দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
আর যদি আপনি একমাসের জন্য চা পান থেকে বিরত থাকেন তাহলে কিন্তু শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ বিষয়ে মুম্বাইয়ের পাওয়াইয়ের ডা. এলএইচ হিরানন্দানি হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ রিচা আনন্দ বলেন, ‘এক মাসের জন্য চা ছাড়লে শরীরে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন ঘটে। যেমন- ক্যাফেইন কম খাওয়ার কারণে ভালো ও উন্নত ঘুম হয় এমনকি কমে উদ্বেগ।’
এই পুষ্টিবিদ আরও জানান, অতিরিক্ত চা পান করলে প্রস্রাব বেশি হয়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। তাই চা পান করা বাদ দিলে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকে ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমে।
ভারতের পুনের রুবি হল ক্লিনিকের আরেক পুষ্টিবিদ ড. কমল পালিয়ার মতে, ‘চা পা করা কমালে শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমে, যার ফলে সেলুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এই অভ্যাস হজমজনিত রোগ ও নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডায়েট থেকে চা বাদ দেওয়ার কিছু অসুবিধাও আছে উল্লেখ করেন কমল পালিয়া বলেন, ‘কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে চা পান করা মানসিক শান্তির কারণ হতে পারে। তাই এটি ছেড়ে দিলে মানসিক পরিবর্তন ঘটে।’
এ বিষয়ে একমত ভারতের আইথ্রিভ প্রতিষ্ঠানের সিইও ও পুষ্টিবিদ মুগদা প্রধান। তার মতে, ‘আপনি যদি নিয়মিত চা পানের অভ্যাস ত্যাগ করেন তাহলে হঠাৎ ক্যাফেইন ছাড়ার কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- ক্লান্তি, মস্তিষ্কের কুয়াশা, মনোযোগের অভাব, তন্দ্রা ও মাথাব্যথা। তবে এসব লক্ষণ মাত্র কয়েকদিন স্থায়ী থাকতে পারে, পরে ঠিক হয়ে যায়।’
তবে আপনি যদি অতিরিক্ত চা পানের অভ্যাস ত্যাগ করতে চান তাহলে এর পরিবর্তে ভেষজ চা ও ফলের রস পানের অভ্যাস করতে পারেন। এতে চায়ের নেশাও কাটবে আবার শরীরেও মিলবে পুষ্টি।
পুষ্টিবিদদের মতে, ‘ক্যামোমাইল বা পেপারমিন্টের মতো ভেষজ চা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এমনকি ফলের রস শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করে। চাইলে লেবু বা মধু মিশিয়েও হালকা গরম পানিতে চুমুক দিতে পারেন। এতে আরাম বোধ করবেন।’ যাদের আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা আছে তাদের যে কোনো চা পানে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ চায়ের ট্যানিন আয়রন শোষণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া উদ্বেগজনিত ব্যাধি বা হার্টের অ্যারিথমিয়াসের মতো কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা শর্তযুক্ত ব্যক্তিদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চা পান না করা। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস