স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে কারা জড়িত সেটা আমাদের ভালো করে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় কুশীলবদের চিহ্নিত করতে হবে। কারা এই ঘটনার নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কারা এর উপকারভোগী সেটা আমাদের জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার আগে ছোট ছোট অনেক ইঙ্গিত পেয়েছি। কিন্তু তখন আমরা বুঝিনি। সবগুলো যদি যোগ করি তাহলে ভয়ানক একটা সর্বনাশ আসছিল সেটা আমরা বুঝতে পারনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু মাতার কথা। তিনি বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য করতেন। অনেক ইতিহাস বঙ্গমাতাকে নিয়ে। যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বললেও শেষ হবে না। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কথা বললেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় কবির চাচা। আগস্ট মাস, শোকের মাস। আমার পরিচিত একজন বললেন রাস্তায় এতো আর্মি কেন? কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, কিছু সময় পরে শুনলাম মেজর ডালিম বলছে সেই ভয়ানক কথা। এর কিছুক্ষণ পরে দেখলাম আমার বাসার পিছনে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে দুইটি ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনও আসল ঘটনা বুঝতে পারিনি। যখন এই নৃশংস ঘটনা শুনলাম তখন মনে হলো আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কি বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনদিন বিশ্বাস করতেন না, যে বাঙালিরা তাকে হত্যা করতে পারে। তাই হয়েছিল। তাও দেখতে হয়েছিল। বিদেশে গেলেও আমাদের শুনতে হয়, যে তোমার সেই জাতি, তোমরা তোমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছো। এই সব কিছুতে একটু হলেও প্রশান্তি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা যেদিন ফিরেছিলেন। তার ফিরে আসায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিলাম। সেটাই হয়েছে। আমরা হৃদয়ে ধারণ করতাম বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হবে। আমরা সেটা দেখে যেতে পেরেছি। আংশিকভাবে হয়েছে। এখনো যারা পলাতক আছে তাদের চিহ্নিত করেছি। আশা করি ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করবো। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বেঁচেছিলেন বলেই আমরা বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অ লে গেলে মানুষ তাকে দেখতে আসেন। বলেন শেখের বেটি এসেছেন।
২১ আগস্ট আবারও হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা যা দেখেছি ২১ আগস্টের হামলায় বোমার পর বোমা ফুটিও তারা যা চেয়েছিল সেটি পারেনি। আমাদের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল করে সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তারপর মনে হয় আমাদের কপালের কালো দাগ মুছতে পারিনি। বঙ্গপোসাগরের সব পানি দিয়ে যদি বাংলাদেশকে ধৌত করি তারপরও কলঙ্ক মুছবে না। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর কন্যা অন্ধকার বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়শনের সভাপতিত্বে একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ভালোবাসা দিয়েই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। যেভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে একটি কথিত স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু এরপর একটি দল বলা শুরু করলো মুসলিমদের ভাষা বাংলা হতে পারে না। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা বলা শুরু করলো উর্দু ভাষায় লিখতে হবে। পাকিস্তান আমলে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষ সারাজীবন ভালোবেসে গেছেন। তিনি মনে করতেন মানুষকে বিকশিত করার জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দরকার। তাই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম করেছেন। এমন কি বঙ্গবন্ধুর সন্তানরা তাকে চিনতে পারতেন না। কারণ দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন।
আইজিপি আরও বলেন, আমরা স্মার্ট পুলিশ গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের লজিস্টিকসহ সব কিছু দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে কাজ করছি। এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব অবস্থা সৃষ্টি করেছি। ফলে মানুষের আয় বেড়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাজেট বেড়েছে ১২ গুণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আবারও বাংলাদেশ পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশকে পেছনের দিকে নিতে যেকোনো প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনোর চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।