সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রফেসর ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধ করে তার মেধা, সৃজনশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী তার যেই জনপ্রিয়তা, এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে প্রজন্ম একাডেমি আয়োজিত ‘জুলুম-নিপীড়নের শিকার, ১৬০ জন বিশ্বনেতার বিবৃতি। দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নোবেল জয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা’-শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটনে একটা মাইক্রোকেডিট সামিট অনুষ্ঠান হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিলেন প্রফেসর ড. ইউনূস ও তার সহযোগীরা। ওই সামিটে আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে এখনো আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- ড. ইউনূস আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে মর্তে এসেছেন দারিদ্র্য দূর করার জন্য। এরপরই তিনি ২০০৪/২০০৫ সালের দিকে ড. ইউনূসকে রক্তচোষা বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে অনেক রকম বিশ্লেষণ ব্যবহার করেছেন। আমি একজন নাগরিক হিসেবে আমার মনে প্রশ্ন জাগে- এমন কী হলো, কেন তিনি এমনভাবে আখ্যায়িত করলেন? আমার এই বিষয়টি খুব জানতে ইচ্ছা করে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রফেসর ইউনূস যদি সত্যিই কোনো আইন অমান্য করে থাকেন, দুর্নীতি করে থাকেন, তিনি যদি কোনোভাবে অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তাকে অবশ্যই বিচারের আয়তায় আনতে হবে।
কিন্তু দেশে-বিদেশে সবার একটা ধারণা- তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আর এতে আমরা কীভাবে লাভবান হচ্ছি। আমরা যদি তাকে একটা অ্যাম্বাসেডর করতাম, তাহলে তার যে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এবং তার যে সম্পর্ক সারা বিশ্বে, এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতেন। তাই আমি আশা করবো আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কারণ যেটা করা হচ্ছে এটাতে কেউ লাভবান হবে না। বদিউল আলম বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলাগুলোকে ফৌজদারি মামলায় পরিণত করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে শতাধিক নোবেল জয়ী ও বিশ্বের অনেক নেতৃবৃন্দ সোচ্চার হয়েছেন। তাই ড. ইউনূসের প্রতি সদয় আচরণ করা উচিত। তাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধও জানান সুজন সম্পাদক। সভায় প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী বলেন, বিশ্বের দরবারে একটি দুর্ভিক্ষ পীড়িত জাতিকে, দারিদ্র্য পীড়িত জাতিকে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আমাদের সম্মান বয়ে এনেছেন। দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক অবদান রেখেছেন। সামাজিক ব্যবসার পাশাপাশি তার আরও একটি বিষয় বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেটা হলো থ্রি জিরো থিউরি। শূন্য বেকারত্ব, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য পরিবেশ দূষণ। যা বিশ্বব্যাপী অনেক সমাদৃত হয়েছে। আর তার মতো একজন সম্মানী মানুষকে আমাদের দেশের সরকার প্ল্যান করে অপমানিত করেছে। এখন এমন একটা পরিস্থিতি যারা আওয়ামী লীগের বাইরে কথা বলবেন, তার বিরুদ্ধেই মামলা-হয়রানি হয়। আমরা দেখছি একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান শুধু ইউনূসের বিপক্ষে স্বাক্ষর করেনি তাই তাকে আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে গিয়ে জীবন রক্ষা করতে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেচার। আওয়ামী লীগের মধ্যে থাকলে আপনি হাজারটা অন্যায় করলেও কোনো সমস্যা নেই। আর এর বিপক্ষে গেলেই আপনি গুরুতর অপরাধী। প্রজন্ম একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহিনের স ালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারুনুর রশিদ হারুণ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আবু হায়দার সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, এডভোকেট এম হেলাল উদ্দিন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মঞ্জুর হোসেন ইসা প্রমুখ।