শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

গৃহিণী থেকে দেশসেরা ফ্রিল্যান্সার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পুরোদস্তুর গৃহিণী চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা শেখ খাদিজা খানম। তিন ছেলে আর স্বামী নিয়ে তাঁর সংসার। সকাল থেকে সাংসারিক ব্যস্ততায় সময় কাটে খাদিজার। সন্ধ্যায় ঘরের সব কাজ গুছিয়ে একটু জিরিয়ে নেন তিনি। এরপর শুরু হয় তাঁর আরেক জীবন। পুরোদস্তুর গৃহিণী খাদিজা তখন হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী। সামলান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন।
বিদেশি গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে যেসব কাজ করিয়ে থাকে (আউটসোর্স), সেগুলো করে দেন তিনি। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করেন তিনি। তিন বছর ধরে খাদিজা ৪০ জন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন।
যে কাজে দক্ষতা আছে বা যে কাজে অন্তত ৮০ শতাংশ দক্ষতা আছে, সেসব কাজেই আবেদন করতে হবে। যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে।
শুরুতে প্রথম কাজে আয় ছিল ঘণ্টায় ৮ মার্কিন ডলার। এখন প্রতিটি কাজের জন্য প্রতি ঘণ্টায় নেন ১৫ ডলার। এখন প্রতি মাসে তাঁর আয় প্রায় দুই হাজার ডলার। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সম্মাননা।
কৌতূহল থেকে শুরু
২০১৮ সালের ঘটনা। পারিবারিক কাজে ব্যাংকে গিয়েছিলেন খাদিজা। ব্যাংকে কাজের ফাঁকে চোখ আটকে যায় রাস্তার বিপরীতে থাকা একটি প্রযুক্তি কোম্পানির নামফলকে। কাজ শেষ করে সেখানে গিয়ে জানতে পারেন ঘরে বসে আয়ের সুযোগ সম্পর্কে। বাসায় এসে অনেকটা কৌতূহলবশত ভর্তি হন গ্রাফিকস ডিজাইন অনলাইন কোর্সে।
করোনা মহামারিতে খাদিজা অনলাইনে নানা ধরনের কাজ শেখেন। গ্রাফিকস ডিজাইনের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শেখা শুরু করেন তিনি। অ্যাকাউন্ট খোলেন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট বা মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক ডটকমে।
২০১৯ সালে একদিন সাহস করে আবেদন করলেন ফেসবুক পেইড এডসের একটি কাজে। কিছুদিন অপেক্ষার পর কাজটি পেয়ে যান তিনি। কাজের পারিশ্রমিক ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৮ ডলার। শুরু হয় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে খাদিজার যাত্রা। প্রায় এক সপ্তাহ কাজ করার পর হাতে এসেছিল ফ্রিল্যান্সিং যাত্রায় তাঁর প্রথম উপার্জন। সেদিন প্রায় ৩০০ ডলার পেয়েছিলেন তিনি।
দেশসেরা মায়ের পাশে দুই ছেলে
গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন। দেশের সেরা ১৫ ফ্রিল্যান্সারকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত হওয়া একমাত্র ফ্রিল্যান্সার খাদিজা। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে খাদিজা এখন সফল ফ্রিল্যান্সার।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি নিজের পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন খাদিজা। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে বাংলায় স্নাতক করছেন তিনি। সংসার, পড়াশোনা, সন্তান সামলিয়ে তিনি এখন দেশসেরা ফ্রিল্যান্সার।
খাদিজার তিন ছেলে। বড় ছেলে কাজী হাসান আবদুল্লাহ উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। মেজ ছেলে কাজী আবদুর রহমান অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে কাজী আজহারুল ইসলাম চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মায়ের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স শিখছেন কাজী হাসান আবদুল্লাহ ও কাজী আবদুর রহমান।
শেখ খাদিজা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিকে হাঁপিয়ে উঠলেও ধীরে ধীরে সব গুছিয়ে নিয়েছি। দুই ছেলেও ফ্রিল্যান্স জগৎ সম্পর্কে জেনেছে। আমার অনেক কাজে তাঁরা সহযোগিতা করে।’
বর্তমানে খাদিজা আপওয়ার্কে সেরা ৩ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারদের একজন। এগিয়ে যেতে চান আরও। নতুনদের উদ্দেশে শেখ খাদিজা খানম বলেন, যে কাজে দক্ষতা আছে বা যে কাজে অন্তত ৮০ শতাংশ দক্ষতা আছে, সেসব কাজে আবেদন করতে হবে। যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ঘুম, খাওয়া, নিজের যতœ সবকিছু করতে হবে। কোনোভাবেই টাকা অপচয় করা যাবে না।
স্ত্রীর কাজে শুরু থেকেই পাশে থেকেছেন কাজী আবুল হোসেন। স্ত্রীর কাজের সময় ছেলেদের স্কুলে নেওয়া, খাওয়াদাওয়া, সংসারের কাজ—সবটা তিনি করেন। তিনি বলেন, ‘খাদিজার এগিয়ে যাওয়ার যাত্রায় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’
এখন খাদিজা ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, প্রিমিয়ার প্রো, ক্যানভা প্রো, ডিজিটাল মার্কেটিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেইড মার্কেটিংয়ে দক্ষ। সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়েছেন খাদিজা। তিনি বলেন, ‘বাসায় কাজ করা মানে যে সময় নষ্ট করা যাবে তা নয়। কাজ ফেলে রেখে আড্ডা-গল্পে মোটেও মেতে ওঠা যাবে না। আগে কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্ব দিয়ে কাজ করলে সাফল্য আসবেই।’ সূত্র প্রথম আলো




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com