মেরে, ধরে, গুম, খুন করে বর্তমান সরকার সাময়িক কিছু সময়ের জন্য আয়ু বাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকার ম্যাক্সিমাম যেটা করতে পারে, সেটা হলো তার আয়ু কিছু বাড়িয়ে নিতে পারে। এই সরকার মেরে, ধরে, গুম, খুন এগুলো করে সাময়িক কিছু সময়ের জন্য তার আয়ু বাড়াতে পারে। আবার নাও পারতে পারে। কিছু আয়ু হলেও বাড়তে পারে, তবে এই সরকারকে যেতে হবে। টাইম শেষ, এক্সপায়ার্ড ডেট শেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে বিদায় নিতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম আয়োজিত ‘১/১১ ষড়যন্ত্র, আজকের প্রেক্ষাপট : দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবো। বিশ্ব বিবেক, বিশ্ব গণতন্ত্র আমাদের পক্ষে আছে, জনগণের পক্ষে আছে। আমাদের জয় সুনিশ্চিত। তবে এই জন্য আগামী দিনগুলোতে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। প্রত্যেকটি ঘণ্টা, প্রত্যেকটি দিন আন্দোলনের সাথে সবাইকে থাকতে হবে। এই দুটি মাস দেশের মানুষের জন্য সেক্রিফাইস করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নয়, দেশ চালাচ্ছে রেজিম মন্তব্য করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন হলো একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অপর রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। এখানে একটি দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্য একটি দল বা একাধিক দলের সাথে। কিন্তু এখন তো দেশ চালাচ্ছে একটি রেজিম। অনেকেই হয়তো বলবে যে আওয়ামী লীগের কথা। কিন্তু দুঃখিত, এখানে আওয়ামী লীগের কিছু নাই। এটা একটা রেজিম, তারা জোর করে দেশ চালাচ্ছে। এই রেজিমকে দূর করতে হবে। আমাদের আন্দোলন তো এই রেজিমের বিরুদ্ধে হচ্ছে। এটিকে দূর করতে হলে সমস্ত জাতিকে একত্রিত হতে হবে। দেশে এখন আরো একটি মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে।
তিনি বলেন, ১/১১-এর মাধ্যমে যেটা হয়েছে সেটা হলো দেশের গণতান্ত্রিক যে কাঠামো সেখানে তারা আঘাত করেছে। রাজনীতিতে এই লোকগুলোর আসার কোনো অধিকার নেই। রাজনীতিতে আসতে হবে নির্বাচিত হয়ে। একটা নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায়। যা একটি সুন্দর সরকার দেবে সেটাই সংবিধান। অথচ তারা ভোট চুরির অংশ হিসেবে বলছে সংবিধানের কথা। তারা মানুষের অধিকারের কথা বলছে না। তারা একটা ভোট চুরির প্রকল্পের কথা বলছে। এই প্রকল্পের মধ্যে বিচারক আছে, সরকারি কর্মকর্তারা আছে, ব্যবসায়ীরা আছে, লুটেরা আছে, রাজনীতিবিদ আছে, সুবিধাভোগীরা আছে। তারা ভুলে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে শুধুমাত্র জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনই দেখা গেছে। যতবার নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচন হয়েছে ততবার জনগণের প্রতিফলন সুন্দর করে উঠে এসেছে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলো সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ। এজন্য জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে যে নির্বাচনটা হয়েছে, সংবিধানে আছে সংসদ বাতিলের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। তো সেই নির্বাচন হয়েছে দুই বছর পর। তাহলে এটা কি সংবিধানসম্মত হয়েছে? এটা সংবিধানের বাইরে না? আমরা সেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম তাই জনগণের প্রত্যাশায় প্রতিফলন ঘটেছিল। কিন্তু এখন সে প্রতিফলনকে আবার একটি ভোট চুরির প্রকল্প বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক ঐকমতের ভিত্তিতে যে নির্বাচন হবে সেটা সরকার এককভাবে বাতিল করেছে। সংবিধানের সাত ধরাতে বলা হচ্ছে সংবিধান হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। ওইটার সাথে তারা বেইমানি করছে। ভাওতাবাজি করছে সংবিধানের নাম ধরে। সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ছিল, সেটা জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে। যে সংবিধানে জাতীয় ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, জাতীয় ঐক্যমতের প্রতিফলন ঘটেনি, সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে এগুলো তারা করতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, জিয়া পরিষদের উপদেষ্টা রোটারিয়ান এম. নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।