শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সভার গুরুত্ব কতটা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সারাবিশ্বের সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। একই মে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হয় বলে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের এই সভাকে ‘কূটনৈতিক স্পিড ডেটিং’ ইভেন্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন অনেক কূটনীতিক। এবারের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রধান আলোচনা বিষয় থাকবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি। এর পাশাপাশি প্রাধান্য পাবে ইউক্রেন যুদ্ধও।
কিন্তু জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে কেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা? জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের গুরুত্বই বা কী?
জাতিসঙ্ঘ ও সাধারণ পরিষদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসঙ্ঘ গঠন করা হয়, তখন এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা। ওই সময় ৫১টি দেশ নিয়ে তৈরি হওয়া সংস্থাটির বর্তমান সদস্য দেশ ১৯৩টি। এর বাইরেও পোপের অধীনে থাকা রোমের অ ল হোলি সি বা ভ্যাটিকান সিটি এবং ফিলিস্তিনও জাতিসঙ্ঘের অন্তর্ভূক্ত। সহজভাবে বললে, জাতিসঙ্ঘের মূল লক্ষ্য পারস্পারিক সহায়তার মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। জাতিসঙ্ঘের অধীনে সারাবিশ্বে কয়েক হাজার উন্নয়ন প্রকল্প, ত্রাণ কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা পরিচালিত হয়।

পরিবেশ ও জলবায়ু থেকে শুরু করে, শিক্ষা, শিশু অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিও সম্পন্ন হয়ে থাকে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে। জাতিসঙ্ঘের প্রধান শাখা ছয়টি। যার মধ্যে তিনটি শাখাকে মনে করা হয় সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। এগুলো হলো সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫টি দেশ, যাদের মধ্যে স্থায়ী সদস্য দেশ পাঁচটি। বাকি ১০টি দেশ দু’বছরের জন্য সদস্য পদ পায়। আর সেক্রেটারিয়েটকে বিবেচনা করা হয় জাতিসঙ্ঘের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। বিভিন্ন দেশের হাজারো কর্মী কাজ করে নিউ ইয়র্ক, জেনিভা, নাইরোবি আর ভিয়েনায় অবস্থিত জাতিসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোতে। ওই শাখাগুলোর মধ্যে সাধারণ পরিষদের সভার মধ্য দিয়েই জাতিসঙ্ঘের বেশিরভাগ কাজ শুরু হয়ে থাকে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ সংস্থাটির একমাত্র শাখা যেখানে ১৯৩টি সদস্য দেশের সবাই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। প্রতিটি সদস্য দেশই এই সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়।
এই সাধারণ পরিষদের সভায় প্রত্যেক দেশের নেতা অথবা দেশটির কোনো একজন প্রতিনিধি সাধারণত বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং যেসব বিষয়ে ভোটাভুটি হয়ে থাকে সেখানে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আর সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক সদস্যের ভোট সমান গুরুত্ব পেয়ে থাকে। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব কে হবেন, তাও নির্ধারণ করে থাকে। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য কারা হবে এবং জাতিসঙ্ঘের বাজেট কেমন হবে, তাও নির্ধারণ করা হয় সাধারণ পরিষদে।
কী আলোচনা হবে সাধারণ পরিষদে? এবারের সভায় টেকসই উন্নয়ন নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর। ওই সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাতিসঙ্ঘের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ কিভাবে অর্জন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবে। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা নিরসন, সারাবিশ্বে মানুষের আয় বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা এবং মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
এরপর ১৯ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ সভার আলোচনা। এই আলোচনা পর্বে সাধারণত বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন এবং ওই বিষয়ে আলোচনা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে ২০ সেপ্টেম্বর ‘ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিটে’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্দেশে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এই সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মহামারি মোকাবেলা ও পরমাণু অস্ত্র বাতিল করার বিষয়েও আলোচনা হয়ে থাকে। প্রতিবছর সাধারণ পরিষদের সভা শুরুর আগে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর কূটনীতিক ডেনিস ফ্রান্সিস।
এবারের সভার ফলাফল কী হতে পারে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নেতারা জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভায় অংশ নিলেও মূলত সভার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে হওয়া বৈঠকগুলোই সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে ওঠে। এবারের সাধারণ সভায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অংশ নেবেন এবং তার দেশে চলমান যুদ্ধ নিয়ে বক্তব্য দেবেন।

তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডন্টে শি জিনপিং ও ফ্রান্সের প্রেসডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবারের সাধারণ সভায় যোগ দেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকও এবারের সভায় অংশ নেবেন না বলে বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে।
সাধারণ সভার বিতর্ক কিভাবে কাজ করে? সাধারণত সাধারণ সভায় প্রথম বক্তব্য দেয় ব্রাজিলের নেতা, তারপর বক্তব্য রাখেন স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। একসময় যখন সাধারণ পরিষদের সভায় কোনো দেশ শুরুর বক্তব্য রাখতে চাইত না, তখন ব্রাজিল স্বপ্রণোদিত হয়ে শুরুতে বক্তব্য দেয়ার রেওয়াজ চালু করেছিল। ওই রীতি মেনেই এখনো ব্রাজিলই সভার সূচনা বক্তব্য দেয়। জাতিসঙ্ঘের ছয়টি আনুষ্ঠানিক ভাষার- আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফ্রে , রাশিয়ান, স্প্যানিশ- যেকোনো একটি ব্যবহার করে প্রত্যেক দেশের নেতা বা নেতার প্রতিনিধি বক্তব্য দিতে পারেন। প্রত্যেক সদস্যকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বক্তব্য শেষ করতে বলা হলেও প্রতিনিয়তই এই নিয়ম ভাঙা হয়ে থাকে। যেমন সাধারণ সভায় দীর্ঘতম ভাষণ দেয়ার রেকর্ড কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর। ১৯৬০ সালে তার বক্তব্যের দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে চার ঘণ্টা। প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধিরা দেশের নাম অনুযায়ী ইংরেজি অ্যালফাবেটিক অর্ডারে বসে থাকেন। তবে প্রথম আসনে কোনো দেশ বসবে, তা নির্ধারণ করেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব। এ বছরের সভায় প্রথম আসনে বসবে নর্থ মেসিডোনিয়া। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com