বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দেশের মানুষও সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। যারা বিচারের নামে অপবিচার করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন- এমন কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সরকারের দালাল, এদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন, নি¤œ আদালতের রায় দিয়েছিল ৫ বছর অথচ উচ্চ আদালত তা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ঢাকা মহানগরের প্রতিবাদ সমাবেশে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, উত্তরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা ফরহাদ হালিম ডোনার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কোনো প্রকার প্রশ্ন উঠেনি। দেশের মানুষের যেন ভোটের প্রতিফলন ঘটে। সেই জন্যই তিনি (খালেদা জিয়া) এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরপর থেকে ১৪ ও ১৮ সালে কোনো ভোট হয়নি। কী হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে। ‘আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এজন্যই তিনি দেশের মানুষের নেত্রী হয়েছিলেন। তিনি কোনো দল ভাঙতে চাননি। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ভাঙতে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।’ বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ আগুন লেগেছে সরকারের, ১৬৫ জন নিয়ে আমেরিকা গেয়েছে, সেখানেই বসে থাকতেই ভিসা নীতির গুরুত্বরোপ করেছে। ভিসা নীতি নিশ্চয় কোনো দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। শুধু মার্কিন নয়, এ দেশের মানুষও স্যাংশন দিয়েছে এ সরকারকে। এ সময় সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলার মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, মুক্ত দেখতে চায়। যে বিচারকরা একটি বিষয়ে দুই রকমের রায় দিয়েছে, এ দেশের মানুষ একদিন তাদের বিচার করবে।
তিনি আরো বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা ব্যাথা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু সাবেক ও বর্তমান আমলা মিটিং করেছে, তারা নাকি এই সরকারকে রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করতে চায়। এখন আবার পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নাকি মিটিং করে যাচ্ছে, যেভাবেই হোক, বিএনপির আন্দোলন দমন করতে হবে। মিটিং আর গোপনে করেন না, প্রকাশ্যে করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা প্রকৃতিকে জয় করতে পারে তারা এই স্বৈরাচারকে পতন ঘটাতে পারবে। আপনারা বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলেন। আপনারা পারবেন। বিচাপতিদের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, অন্যদের মুক্তি দেন, অথচ কেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না। এর বিচার একদিন দেশের মানুষ করবে। তার বিদেশ চিকিৎসা নেয়া সাংবিধানিক অধিকার। কেন যেতে দিচ্ছেন না? আদালত আমাদের সাথে নির্দয় আচরণ করে যাচ্ছে। যে মামলার তারিখ পড়ত এক মাস পর, তার ডেট দিচ্ছে সপ্তাহের মধ্যেই। এতে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? না। পারবেন না। এখন আমাদের পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই, এখন সামনে যেতে হবে। ডু অর ডাই। এর মাঝামাঝি কোনো জায়গা নাই।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনারা প্রস্তুতি নিন, যে ধর্ষণ, অপরাধ করেছেন, তার ফল ভোগ করতে। কারণ বিদেশে তো আর যেতে পারবেন না। আপনাদের সমস্ত অপরাধে জেলে যেতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে কেন রাজনৈতিকভাবে মামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, তার মামলার কোনো সাক্ষ্য, প্রমাণ ছিল না। আজকে বলতে হবে এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। বেগম খালেদা জিয়াকে এই দেশের মানুষ ভালোবাসেন। তিনি জনগণের হয়ে কাজ করেন। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। গণতন্ত্র হত্যা করতে চায় কিন্তু এটা সম্ভব নয়। দেশের মানুষ বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাথায় তুলে রেখেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এই সরকার। বিএনপিকে ধংসের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে এই সরকার। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে ভোট চুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মুক্তি ভিক্ষা মনে করছে সরকার। এই বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার ও অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তার চিকিৎসা নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে তারা। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ প্রহর গুনছে কবে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে নেয়া হবে। নইলে দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। চলে যাওয়ায় সময় হলেও একটা ভালো কাজ করে যান। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, কয়েকদিন আগে বললো আমেরিকা যাবো না, কোনো কূল না পেয়ে এখন বলছে আমরা স্যাংশন দেব। আজকে সরকার বিএনপি, জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বলে- আমরা যুদ্ধ চাই না। মানবাধিকারের কথা বলে, অথচ তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাতে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে : রিজভী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনার পতনের ঘণ্টা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গা থেকে বাঁচছে। মানুষ হৃদয়ের মধ্যে আপনার পতনের সাইরেন শুনতে পাচ্ছে। তিনি বলেন, এই প্রচ- বৃষ্টির মধ্যেও স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল,মহিলা দল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কোথাও আশ্রয় নেইনি, শেখ হাসিনা এদেরকে আটকাতে পারিনি। আপনাদের যে সাহস, যে মনোবল রয়েছে, এই কারণে শেখ হাসিনা আর বেশিদিন ফ্যাসিবাদ চালাতে পারবে না। গতকাল রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এই প্রতিবাদ সমাবেশটির আয়োজন করা হয়। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। করোনার সময় টিকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে তারা। যে কয়টা দেশ বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে তার এক নম্বরে রয়েছে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে, তখন শেখ হাসিনার ঘুম হারাম হয়ে যায়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু বুদ্ধিজীবীরা বলে বিদেশীরা দেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ দেয়া যাবে না। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই রাজনৈতিক সমস্যাই তো বড় সমস্যা। যে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় না, গুম-খুন করে রাতে নির্বাচন করে তার বিরুদ্ধে কি কথা বলা যাবে না!
যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এতদিন আপনি বলেছেন আমার কোন টাকা-পয়সা নেই। এখন প্রধানমন্ত্রী আপনি বলছেন আমেরিকায় জয়ের সম্পদ আছে, ঘরবাড়ি আছে। কত টাকা পয়সা আছে? এটা কিন্তু বলেনি। এটা জনগণ জানতে চায়। এতদিন পর আপনার মুখ থেকে কথা বের হলো। আপনার কত টাকা আছে, এটাও মানুষ জানতে চায়। মানুষ খেতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারে না, একটা ডিম কিনতে পারে না। বাজারে গেলে মানুষের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আর আপনি আপনার নিজের লোক ১৬৭ জনকে বিমানে করে নিয়ে গেছেন। সুতরাং জনগণের টাকা, দেশের টাকা আপনি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। এর বিচার কিন্তু একদিন হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আপনি দেশনেত্রীকে বন্দী করবেন। তাকে সুচিকিৎসা করতে দেবেন না। নেতাকর্মীদেরকে বন্দী করবেন, এটা আর হতে দেয়া হবে না।
এ সময় রিজভী কারাবন্দী বিএনপি নেতা রফিকুল আলম মজনু এবং রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদকে কারগারে হয়রানিমূলক মামলায় নিপিড়ন নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারকেই বহন করতে হবে : টুকু
খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। তিনি বলেন, ‘আজ বেগম খালেদা জিয়ার যদি কোনো অঘটন ঘটে, এদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না, টেনে-হিঁচড়ে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে।’
গতকাল রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই প্রতিবাদ সমাবশের আয়োজন করা হয়। টুকু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার দাবিতে এই কর্মসূচি। তিনি শুধু একটি দলের প্রধান নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এরপর থেকে যতবার ক্ষমতায় এসেছেন ততবার দেশ এবং গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন।’ এসময় যুবদল সভাপতি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করেন। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত সপ্তাহে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে তাকে কেবিন থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) এনে চিকিৎসা দিতে হয়। ইতোমধ্যে তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।