মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

ঐক্যের ডাক

নাজমুল হুদা মজনু
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঐকের ডাক দিয়েছেন। এ আহ্বান নিঃসন্দেহে ম’মিনদের প্রতি। কেননা, সম্প্রীতি-সংহতির মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও বিজয় অনিবার্য। আজকে সারা দুনিয়ায় ইসলামবিদ্বেষীদের আস্ফালন, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে আমাদের। আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ-বিষম্বাদে ডুবে আছি আপাদমস্তক। ছোটখাটো মতপার্থক্যের কারণে পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি করছি। আফসোস, সামান্য মতভেদের জন্য পরস্পর সালাম বিনিময়ে দ্বিধাবোধ করছি। আমরা ভুলে গেছি, সালাম বিনিময় মুসলমানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ অধিকার। মনে হয় শয়তান আমাদের ভালোভাবেই পেয়ে বসেছে। হায় এ যেন আত্মহননের উৎসব।
আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান বাস্তবায়ন করতে হলে আল্লাহর হাবিবের সুন্নত শতভাগ আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, প্রিয় রাসূল সা:-এর সাহাবায়ে কেরাম যেমন জায়নামাজে অশ্রু ঝরিয়েছেন তেমনি রক্ত দিয়ে সিক্ত করেছেন তপ্ত মরুর ঊষর প্রান্তর। শুধু মিষ্টি খাওয়ার সুন্নত পালন করলেই নয়; প্রয়োজনে আমাদেরও রক্ত ঝরাতে হবে। এ জন্য কুরআনুল কারিমের কাছেই ফিরতে হবে। আল্লাহর বাণী বুকে ধারণ করা ব্যতীত পুরোপুরি মু’মিন হওয়া যাবে না। সেই সাথে আল্লাহর রাসূল সা:-এর জীবনাদর্শ অন্তরের অন্তস্তলে গেঁথে নিতে হবে। তাই এক মুসলিম ভাই আরেক মুসলিম ভাইকে বুকে আগলে ধরতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেছেন- ‘তোমরা সবাই মিলেমিশে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন একে অন্যের মনে ভালোবাসা স ার করেছিলে; অতঃপর অতীতের সব শত্রুতা ভুলে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। অথচ তোমরা ছিলে সঙ্ঘাতের অগ্নিপ্রান্তে। সেখান থেকে দয়ালু আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়ায় তোমাদের উদ্ধার করলেন। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তার নিদর্শনগুলো তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো’ (সূরা আলে ইমরান-১০৩)।

এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা দু’টি পদ্ধতির দিকে জোর দিয়েছেন। যার ওপর গোটা ইসলামী ব্যবস্থা নির্ভর করে। তাফসির ফি জিলালিল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে- এ দু’টি মূলনীতি হচ্ছে ঈমান ও ভ্রাতৃত্ব। ঈমান ও ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং তাকওয়া অবলম্বন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদাররা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, ঠিক যেভাবে ভয় করা উচিত। আর মুসলমান না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না’ (সূরা আলে ইমরান-১০২)। উল্লিখিত অমিয় বাণী শুনে আল্লাহভীরু মানুষের অন্তরে তাই দুনিয়ার ভীতি ঘুচে যায়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তাকে আরো সাহসী করে তোলে। ফলে সহজেই সে লড়াই-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। ইসলামের স্বর্ণালি ইতিহাসে তাই আমরা দেখতে পাই- আল্লাহর হাবিবের সাহাবিরা আল্লাহর রজ্জু ধারণ করে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘মুহাম্মাদের অনুসারীরা পরস্পর সহানুভূতিশীল; কিন্তু অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বড়ই কঠোর’ (সূরা আল ফাতাহ-২৯)।
কুরআন-হাদিসের শিক্ষা হলো- মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই সে তার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ফেলতে পারে না। যে ব্যক্তি অপর ভাইকে সহযোগিতা করে আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য করেন। যে তার ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দেয় আল্লাহ তার বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তায়ালা কঠিন বিচারের দিনে তার দোষ গোপন রাখবেন। শুধু তা-ই নয়, কোনো মুসলমান যদি মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে ফেরেশতারা তখন আমিন আমিন বলতে থাকেন। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মু’মিনরা পরস্পরে একটি প্রাচীরের মতো; একে অপরের শক্তি বৃদ্ধি করে’ (বুখারি-২৬৪৬)। আসুন, আমরা সবাই মিলে ইসলামের শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তুলি। মু’মিনের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। লেখক : সাংবাদিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com