প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়ার জন্য মানুষ হন্যে হয়ে উঠেছে। কারণ পৃথিবীর বায়ু যেভাবে দূষিত হতে শুরু করেছে তা আর শ্বাস নেওয়ার যোগ্য নেই। যেহেতু আমাদের পৃথিবী বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী প্রভাবের সাথে লড়াই করছে, সেখানে সমস্ত জীবের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য বিশুদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ুর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। তবে এর মধ্যেও এমন একটি স্থান আছে যেখানকার বায়ু নাকি নির্মলতম। জায়গাটির নাম কেপ গ্রিম। উপদ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার কাছে তাসমানিয়ার উত্তরপশ্চিম প্রান্তের কাছে অবস্থিত। এই অনন্য অভিজ্ঞতার একটি প্রধান কারণ হল জায়গাটির দূরত্ব। খুব কম যাত্রীই কেপ গ্রিমে পৌঁছান, এটি বিশ্বের প্রান্তে অবস্থিত। বায়ুর গুণমান পরিমাপকারী একটি স্টেশন দেখায় যে এখানে গ্রহের সবচেয়ে পরিষ্কার বাতাস রয়েছে। কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের সিনিয়র বিজ্ঞানী ডক্টর অ্যান স্ট্যাভার্ট জানাচ্ছেন-” ‘কেপ গ্রিম এয়ার মনিটরিং স্টেশনে পশ্চিমি হাওয়া বরফে ঢাকা দক্ষিণ মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রবল বেগে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, সেই কারণেই এখানকার বায়ু বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার। ”অঞ্চলটি দমকা হাওয়ার জন্য বিখ্যাত, যা প্রতি ঘণ্টায় ১৮০ কি.মি. বেগে বয়ে যায় এবং অ্যান্টার্কটিকা থেকে অপরিশোধিত বায়ু বহন করে আনে। কেপ গ্রিমের অন্তত ৩০% বাতাসকে বিজ্ঞানীরা “বেসলাইন” বলে বিবেচনা করেন।
অর্থাৎ, স্থানীয় বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলির প্রভাব পড়ে না এই বায়ুতে। বিশ্বের অন্যান্য নির্মল বায়ুর শহরগুলির মধ্যে রয়েছে হাওয়াইয়ের মাউনা লোয়া স্টেশন, ম্যাককুয়ারি দ্বীপ, অ্যান্টার্কটিকার কেসি স্টেশন এবং ন্যয়-আলেসুন্ডের স্বালবার্ড শহর। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক এবং কর্মীরা বায়ুর গুণমান নিরীক্ষণ করতে, শিল্প ও পরিবহণ উৎস থেকে নির্গমন কমাতে এবং আমাদের গ্রহের ভঙ্গুর বায়ুমণ্ডলকে রক্ষা করে এমন টেকসই অনুশীলনের প্রচার করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য এই অন্বেষণ শুধুমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য নয় বরং মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রয়াস। এই বিষয়ে, কেপ গ্রিম সারা গ্রহের মানুষকে সাহায্য করতে পারে। এটি বিপণনকারীদের একটি সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে। তারা বিশ্বজুড়ে দূষিত স্থানের লোকেদের স্বাস্থ্যকর বাতাস সরবরাহ করতে বোতলজাত তাসমানিয়ান বাতাস বিক্রি করছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রতি ক্যানিস্টার থেকে প্রায় ১৩০ জন তাজা তাসমানিয়ান বায়ু গ্রহণ করতে পারেন । সূত্র: এনডিটিভি