তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে। মনে স্বাদ কালো মেঘ ফঁড়ে যায় একেবারে উড়ে যায় কোথা পাবে পাখা সে? তাল বা তালগাছের কথা হলেই আগে মনে পড়ে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতাটি। গত দুই তিন মাস আগেও গ্রীষ্মের খরতাপে মাধবদী বাজারে কাঁচা তালের রসালো শাঁস মানুষের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। এখন শহর-গ্রাম সবখানে তালের রস দিয়ে নানা রকমের পিঠা, পায়েস রান্না হচ্ছে এছাড়াও তালের বড়াসহ রকমারি খাবার তৈরি হচ্ছে। নরসিংদীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আড়তদাররা রাজধানীতেও নিচ্ছেন এখানকার পাকা তাল। ছোট আকারের তাল ৩০/৪০ টাকা থেকে শুরু করে প্রকারভেদে বড় আকারের তাল ১শ থেকে দেড়শ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। তালের ঝুড়িতে সাজিয়ে ফেরি করেও বিক্রি করছেন অনেক তাল বিক্রেতা। শিল্পাঞ্চল মাধবদী বাজারের একজন তাল বিক্রেতা জানান, গত দুই তিন সপ্তাহ থেকেই মাধবদী বাজারে পাকা তাল আসা শুরু হয়েছে। বেশির ভাগই আসছে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তবে গুণগত মানের দিক থেকে নরসিংদীর তালের সুনাম রয়েছে। এসময় বিক্রেতা বলেন সপ্তাহখানেক পরে পাকা তালের পরিমাণ আরো বাড়বে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই কম-বেশি তালগাছ দেখা যায়। কি সমতল, কি পাহাড় কিংবা হাওর-বাঁওড় সবখানেই দেখা যায়। বিগত কয়েক দশক আগে সারাদেশে প্রচুর তালগাছ সারি সারি দেখা যেত নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার পাশে সহ দেশের বিভিন্নঞ্চলে। তালগাছ বর্তমানে অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। বৃক্ষরোপণ অভিযান কালে আমরা অন্যান্য গাছ লাগালেও তালগাছকে এড়িয়ে যাই। অপরিকল্পিত ভাবে কাটা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন আর মাঠের ধারে ও গ্রামের পথের পাশে সারি সারি তালগাছ চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না তালগাছে বাবুই পাখির বাসা বাঁধার মনকাড়া সেই দৃশ্য। তাল (অংরধহ চধষসুৎধ চধষস) একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় গ্রীষ্মকালীন ফল (বৈজ্ঞানিক উপমহাদেশীয় যা তালগাছ নাম ইড়ৎধংংঁং ভষধনবষষরভবৎ) নামক পাম গোত্রীয় গাছের ফল। তালগাছ পাম গোত্রের অন্যতম লম্বা গাছ, যা উচ্চতায় ৩০ ফুট হতে পারে। তালের পাতা পাখার মতো ছড়ানো তাই বোরাসান গণের পাম গোত্রীয় গাছ গুলিকে একত্রে ফ্যান-পাম উপমহাদেশীয় অনেক অঞ্চলেই জনপ্রিয়। কারণ তাল গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সবকিছু ব্যবহার করা যায়। তালপাতা দিয়ে তৈরি হতো সেপাই।
প্রবাদে বলা হয়- তালপাতার সেপাই। একটা কাঠির আগায় লাগানো থাকত। কাঠিটি হাতের আঙুল দিয়ে ঘোরালেই সেপাই। নানা কায়দায় তালপাতার ব্যবহার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। হাত পাখার কথা তো বলাই বাহুল্য। এ দিয়ে টুপি, ঝুড়ি, চাটাই, মাদুর, বেড়াসহ নানা খেলনা যথাযথ তৈরি হয়। কাঠও দারুণ শক্ত এবং আশযুক্ত। সহজে পচে না বা নষ্ট হয় না। ছোট ডিঙি নৌকা তো হয়ই, ছাতির বাঁট, লাঠি, বাক্স, পাপোশ ইত্যাদি জিনিসও তৈরি হয় ওই তালগাছ থেকে। গ্রামের বহু পুকুরের ঘাটলাও তৈরি করা হয় তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে। তালগাছ চিরে যে নৌকা তৈরি করা হয় তার নাম ডিঙ্গি নৌকা বর্ষাকালীন সময়ে এক উপকারী নৌযান এটি। শাপলা তুলতে, মাছ ধরতে, পণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনে এটা দারুণ দরকারি। তাল ফলটি যেমন শরিরের জন্য উপকারী তেমনি তাল গাছও অনেক উপকারী এবং বিভিন্ন কাজে লাগে।