গত ১০ দিন ধরে লিবিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশি মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক লাজু মিয়া(২৫)কে ফেরত তার চান বাবা-মা। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেমের প্রথম ছেলে। আবুল কাশেম জানান, তার ছেলে লাজু মিয়াকে গত বছরের ৬ অক্টোবর কর্মসংস্থানের জন্য লিবিয়ায় পাঠান। কিন্তু সেখানে কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ না পাওয়ায় ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইতালি যাওয়ার সময় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে আটক হন লাজু মিয়া। তারা লাজুকে একটি ঘরে আটকে রেখে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে বার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই হাত পেছনমোড়া করে বাঁধা। উপুর করে শুইয়ে রাখা হয়েছে।হাঁটু ভাজ করে পায়ের তলায় লাঠি দিয়ে পেঠাচ্ছে দুই-তিনজন।নির্যাতনের ফলে চিৎকার করছেন লাজু মিয়া। দাবিকৃত টাকা না পেলে তাকে হত্যা করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকীও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার সামথ্য নাই পরিবারের। ফলে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই তাদের। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলপুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা সালমা আকতার কবিতা জানান, লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের কথামতা গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাড়ে বার লাখ টাকা নিয়ে কুমিল্লায় সদরে যান। কুমিল্লা র্যাব-১১ সদস্যরা জেলার চান্দিনা হাড়িখোলা এলাকায় টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করে।পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও দুইজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- ভৈরবের সুমন, কুমিল্লার আনোয়ার হোসেন ও শিহাব। এ ঘটনায় কুমিল্লার চান্দিনা থানায় আটক ৩ জনসহ মোট ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন আবুল হোসেন। মানবপাচার আইনে করা এই মামলায় তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এতকিছুর পরও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্যও হুমকী দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আবুল কাশেম। মুঠোফোনে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, এই মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ৬ জন থাকেন বিলিয়ায়। আর গ্রেপ্তার তিনজন বাংলাদেশে থেকে তাদের সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে টাকা লেনদেন হয় তাদের মাধ্যমে। উল্লেখ্য,আবুল কাশেমের প্রতিবেশি ভাতিজা শাহারুল ইসলাম বিলিয়ায় থাকেন। শাহারুল তার ভাই মিজানের মাধ্যমে আবুল কাশেমের নিকট থেকে প্রথমে পাঁচলাখ টাকা নেয়। পরে মিজান ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচপোর্ট ও ভিসা করে লাজু মিয়াকে লিবিয়ায় শাহারুলের নিকট পাঠায়। লিবিয়ায় কর্মহীন অবস্থান লাজু প্রায় সাতমাস শাহারুলের কাছে থাকেন।এ সময় লিবিয়ায় কর্ম না থাকায় লাজু মিয়াকে ইতালি যেতে উৎসাহিত করা হয়। ইতালি যাওয়ার জন্যও আবুল কাশেমের নিকট থেকে ৭লাখ ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার পর তার সন্তানকে তুলে দেওয়া হয় এই মানবপাচারকারী চক্রের হাতে।