হাজত পূর্ণ হয় : প্রাত্যহিক জীবনে আমরা নানা সঙ্কট ও সমস্যায় পড়ি। সমাধানের জন্য দিগি¦দিক ছোটাছুটি করি। তদবির করি। হিমশিম খেতে থাকি। তবু সমাধান বের করতে ব্যর্থ হই। আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনও অনেক। তাই অনেক ক্ষেত্রে পূরণ না হওয়ার আফসোসে ভোগী। অথচ দরূদ পড়লে দুনিয়া-আখিরাতের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। নবীজী সা: বলেন, ‘যে আমার ওপর প্রতিদিন ১০০ বার দরূদ শরিফ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার ১০০টি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন। এর মধ্যে আখিরাতে ৭০টি ও দুনিয়ায় ৩০টি।’ (তাবারানি)
শাফায়াত লাভ হয় : বেশি বেশি দরূদ পাঠের মাধ্যমে নবীজীর শাফায়াত লাভে ধন্য হওয়া যায়। আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। জান্নাতে নবীজীর নিকটবর্তী হওয়া যাবে এবং এই দরূদই পুলসিরাতে নূর হয়ে দেখা দেবে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত রুয়াইফি বিন ছাবিত রা: থেকে বর্ণিত- নবীজী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি দয়া করুন এবং কিয়ামতের দিন আপনার নিকটবর্তী স্থানে জায়গা দিন। এমন ব্যক্তির জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৮/১৬৯৯১)
আরেক হাদিসে নবীজী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর সকালে ১০ বার এবং বিকেলে ১০ বার দরূদ শরিফ পড়বে তার ওপর আমার সুপারিশ আবশ্যক হয়ে যাবে।’ (তাবারানি)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটতম হবে, যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করবে।’ (সুনানে তিরমিজি-৪৮৪)
জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পাঠ : জুমার দিন অত্যন্ত ফজিলতময়। রাত থেকেই শুরু করতে পারি বেশি বেশি দরূদ পড়া। হজরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত- নবীজী সা: বলেন, ‘প্রতি জুমায় তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কেননা প্রত্যেক জুমার দিনে আমার কাছে উম্মতের দরূদ পেশ করা হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করবে সে সবচেয়ে বেশি আমার নিকটবর্তী হবে।’ (বাইহাকি-৩/২৪৯)
একে ত্রিশ : দরূদ এমন একটি আমল। যা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। পুঁজিহীন অসীম লাভজনক এক ব্যবসায়। তাই লেখা ও কাজের ফাঁকে ফাঁকেও মুমিন হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠা দরূদের জন্য খুব স্বাভাবিক। নবীজীর ওপর একবার দরূদ পাঠ করলে ৩০টি সম্পদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত করেন। আর তা হাদিসের ভাষায়- হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি হৃদয়ের ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ১০টি রহমত, (বরকত ও কল্যাণ দান করেন) তার জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়াবেন। ১০টি পুণ্য দান করবেন এবং ১০টি গুনাহ মাফ করবেন।’ (সুনানে নাসায়ি-৯৮০৯)
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : বেশি বেশি দরূদ পাঠ নবীজীর প্রতি ভালোবাসারই অন্যতম নিদর্শন। নবীজীর নাম শুনলেই দরূদ পড়তে হয়। অধিক দরূদ পাঠের মাধ্যমে আমরা ফেরেশতাদের দোয়াও অর্জন করতে পারি। নবীজী সা: বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন আমার ওপর দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে। যতক্ষণ সে আমার প্রতি দরূদ পড়তে থাকে। সুতরাং বান্দা চাইলে দরূদ কমও পড়তে পারে চাইলে অধিকও পড়তে পারে।’ (ইবনে মাজাহ-৯০৭)
দরূদ পাঠ না করার পরিণতি : নবী সা: বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তাঁর ওপর দরূদ পড়লে আমাদেরই লাভ। হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘কৃপণ হলো ওই ব্যক্তি যার সামনে আমার আলোচনা হলো, অথচ সে আমার ওপর দরূদ পড়ল না।’ (তিরমিজি-৩৫৪৬, নাসায়ি-৯৮০০)
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবীজী সা: ইরশাদ করেন, ‘যেখানে কিছু মানুষ বসে (একত্র হয়) এবং সে বৈঠকে তারা আল্লাহর জিকির ও তাদের নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করে না, কিয়ামতের দিন এটি তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হবে। আল্লাহ চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন আবার চাইলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিম-৪৯৬, তিরমিজি-৩৩৮০) লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইবনে আব্বাস রা: সামান্তপুর, জয়দেবপুর, গাজীপুর সিটি