ভৈরবে ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলির সঙ্গে একটি কন্টেইনার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। এ দুর্ঘটনার হতাহতসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। আশংকা করা হচ্ছে শতাধিক আহত মানুষ হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিযেছেন, গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৩ টার দিতে ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ঢাকাগামী রেলপথের ক্রসপয়েন্টে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কন্টেইনারবাহী ট্রেন নং ৩০২৮ এর ইঞ্জিনের ধাক্কায় ভৈরব থেকে ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের ২টি বগী ৭৫০৩ এবং ৭০১৩ তছনছ হয়ে উল্টে যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি ইউনিট উল্টে যাওয়া বগীর ভেতর থেকে এবং নীচ থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত নারী শিশু ও মহিলা সহ ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করে। ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আজিজুল হক রাজন জানান- সন্ধ্যা ৬ টায় ১ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে। ট্রেনের বগীর নীচে আরও লাশ থাকতে পারে। ভৈরব রেলওয়ের কনজার্ভেন্সি ক্লিনার আপন জানান, এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের বগী থেকে গার্ড আলা উদ্দিন কে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব রেলস্টেশন থেকে এগারসিন্ধুর গোধুলী ট্রেনটি ১ নং লাইন দিয়ে ঢাকা যাবার পথে ক্রস পয়েন্ট অতিক্রম করার সময় পাশাপাশি বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কন্টেইনারবাহী ট্রেন ২ নং লাইন দিয়ে ভৈরব রেলস্টেশনে প্রবেশের সময়কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটি এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের ৩য় বগী থেকে ঘর্ষণ করে শেষের দু’টি বগী দুমড়ে মুচড়ে লাইন থেকে উল্টে পড়ে যায়। ঘটনার দেড় ঘন্টা পর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।এছাড়াও ভৈরবের প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং পৌর মেয়র ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন। ঘটনাস্থল এলাকার মাছুম জানান, দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনে গ্রামবাসী উদ্ধারে অংশ নেয়। ঘটনার দু’ঘন্টা পর ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সিগন্যাল কেবিন তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তারফারিয়া নাজমুন প্রভা বলেন, হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন আহত রোগী আসে। তন্মধ্যে অতি গুরুতর আহত ২০ জন রোগী কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত যাত্রীদের মধ্যে বাজিতপুর থানার বোর্ড বাজার এলাকার মৃত আঃ হাই এর পুত্র ৪ সন্তানের জনক শ্রমিক আসিব উদ্দিন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অপরদিকে মিঠামইন থানার রাসেল (২৫) ঘটনাস্থলে মারা যায়। নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, বৃহস্পতিবারে রাসেল সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল।নিহত১৬ জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। ভৈরব উপজেলার মিরারচর গ্রামের আহত যাত্রী মোঃ কাউছার (২৮) জানায়, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চেচামেচি শুরু হয়। মূহুর্তের মধ্যেই ট্রেনের বগী দু’টি উল্টে যায়। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়ে। এছাড়াও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাত ৮ টার পরেও উদ্ধার কাজ চলছে বলে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরব সহ পাশ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রেনের বগী কেটে আহত নিহতদের উদ্ধার করে।