সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

নিজেকে নিয়ে ভাবুন

ফরিদ উদ্দীন খান
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

আমরা নিজের চেয়ে অন্যকে নিয়ে বেশি ভাবি, অন্যের চিন্তায় সদাসর্বদা বিভোর থাকি। অবশ্য দুনিয়ার বেলায় নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকাকে খুব পছন্দ করি! তবে দ্বীন ইসলাম পালনে অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছি। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘হে মুমিনগণ, নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা করো সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর-স্বভাব, কঠিন-হ্রদয় ফেরেশতারা, যারা আল্লাহর কোনো হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটিই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়।’ (সূরা তাহরিম-৬)
সেখানে আমরা কিভাবে নিজেকে ভুলে যেতে পারি! আমার জাহান্নাম থেকে আমার নিজেকেই বাঁচতে হবে, অন্য কেউ এসে বাঁচাতে পারবে না! আল্লাহ বলেন- ‘কোনো ভার বহনকারী অন্য কারো ভার বহন করবে না। আমি কখনো কাউকে শাস্তি দেই না, যতক্ষণ না তার কাছে কোনো রাসূল পাঠাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৫)
আমরা সেই নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ছেড়ে দিয়েছি। অন্যকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি! যা অনেক বেশি আফসোস ও পরিতাপের বিষয়। সন্তান নিয়ে অতিমাত্রায় ভাবতে গিয়ে আমার নিজেকেই ভুলতে চলেছি। নেক আমল করা, ভালো কাজ করা- এসবই আমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য। এ ছাড়া যত সব বিধান আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে, তা সবই আমাদের জান্নাতের পথ সুগম করা এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়-উপকরণ হিসেবে আরোপিত হয়েছে। সেখানে সন্তানকে লালন-পালন, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেয়াসহ অন্যান্য বিধানাবলি উল্লেখযোগ্য।
কিছু বিধান তো এমন রয়েছে, যা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিটি মানুষের জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্যই আরোপিত হয়েছে। আর কিছু বিধান তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার সহায়ক হিসেবে আরোপিত হয়েছে। যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের বিধান। প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর স্বতন্ত্র বিধান হিসেবে আরোপিত হয়েছে। আবার সন্তান লালন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকরণ- এসবই ব্যক্তির জাহান্নাম থেকে বাঁচার সহায়ক বিধান। এখন যদি কেউ ইসলামের মূল বিধান লঙ্ঘন করে সহায়ক বিধান নিয়ে পড়ে থাকে! তা তো নিঃসন্দেহে হতাশার বিষয়। তাই না! যেমন কেউ তার সন্তান নিয়ে অতিমাত্রায় ভাবতে গিয়ে ইসলামের মূল বিধান নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের বিধানকে লঙ্ঘন করতে শুরু করল! তা তো তার জন্য কখনোই মঙ্গলজনক ও সুখকর হবে না; বরং তার জন্য বিপদ-ই ডেকে আনবে!
এ জন্য ব্যক্তির ওপর আরোপিত স্বতন্ত্র বিধান যেমনিভাবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি সহায়ক বিধানাবলিও সমানভাবে পালন করে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদেরকে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচাতে পারব ইনশা আল্লাহ।
একটি করব আরেকটি ছাড়ব- তাতেও হবে না। যেমন আমার নিজেকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে সন্তানের হক আদায়ে অবহেলা প্রদর্শন করলাম, কিংবা আত্মীয়ের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করলাম! এতেও জাহান্নাম থেকে বাঁচা সম্ভব হবে না। আল্লাহ বলেন- ‘এবং বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও আমাদের আনুগত্য করেছিলাম, তারাই আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের প্রতি লানত করুন, মহা লানত।’ (সূরা আহজাব : ৬৭-৬৮) সুতরাং আসুন আমরা আমাদের নিজেকে নিয়ে আগে ভাবতে শিখি। পাশাপাশি অন্যদের নিয়েও জাহান্নামের লেলিহান আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। লেখক : খতিব, মসজিদে কোবা, মোহতামিম, সুলতানিয়া হাফিজুল উলুম মাদরাসা, বিনোদবাইদ, সাভার, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com