ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, একজনের মৃত্যু। হঠাৎ দূর্যোগে মানুষ দ্বীপে বসবাসকারীরা অসহায়ত্বে দিনাতিপাত করছেন। লন্ডভন্ড হয়েছে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনুছখালী নাছির উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, কুতুবজোমে দাখিল মাদরাসাসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি দেশের ঐতিহ্য মহেশখালীর মিষ্টি পানবরজ, ধান, গাছ-পালা, বাড়ীঘর ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। যার দরূণ হাজার হাজর মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। বেশী ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানবরজের। হাজার হাজার পান চাষীরা সুদি মহাজন থেকে সুদের টাকা নিয়ে, কিংবা স্বর্ণ অলংকার বন্ধক রেখে লাখ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে সম্প্রতি পান বরজ রোপনের কাজ শেষ করেছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে পান বিক্রি শুরু করতে পারতেন পান চাষীরা। এ অবস্থায গত ২৪ অক্টোবর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় হামুনে কয়েক হাজার পান চাষী মাথায় হাত দিয়েছে। বাদ পড়েনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এছাড়া ক্ষতি হয়নি এমন পরিবার খুবই কম। এ দিকে শাপলাপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সেলিম মেম্বার জানান, শাপলাপুরের ৮০ % লোকের পেশা পান চাষ। পান চাষীদের ক্ষতি পুরণ বা পুন:বাসন করা না হলে বহু পরিবারের এলাকা ত্যাগ করার সম্ভবনা রয়েছে। মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোহাম্মদ আলী ও নুরুল আবছার জানান কয়েক শত বাড়ীঘরের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ধলঘাটা ইউনিয়নের সমাজ সেবক ফজল কাদের জানান, ধলঘাটার অবস্থা সরেজমিনে দেখলে বুঝা যাবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং ধলঘাটার অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করার? জন্য তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। কালারমারছড়া ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান আবু আহমদ বলেন, পান বরজ ধ্বংস হওয়ার দৃশ্য তিনি আগে এ রকম দেখেনি। পাশাপাশি প্রাণের বিদ্যালয়ের বিধ্বস্তের দৃশ্য দেখে মর্মাহত হয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রাণের বিদ্যালয়ের ক্ষতিপূরণের জোর দাবী জানিয়েছেন। বন্ধ রয়েছে নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে প্রায় ১০/১৫ দিন সয়ম লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এখন জনজীবন অনিশ্চয়ার্থে। নেই কোন যুগাযোগ প্রধান সড়কের উপর বৃহৎ আকারের গাছ-পালা। কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আবু তাহের বিএসসি জানান, হঠাৎ করে হামুন এভাবে আক্রমণ করে বিদ্যালয়ের সাজানো হলরুমটি এলোমেলো হবে, তা কল্পনার বাইরে। তিনি আরো জানান- এছাড়াও গাছ-পালা ভেঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটবে। হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, কুতুবজোম, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ীতে একইভাবে ক্ষতি হয়েছে। তীব্রগতির বাতাসে খাড়া নেই বিদ্যুৎতের খুঁটিও। যার দরুণ কখন মহেশখালীবাসী বিদ্যুৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। গোরকঘাটায় গাছের চাপা পড়ে হারাধন নামের এক হিন্দু ভদ্রলোকের মৃত্যু হয়। এদিকে শাপলাপুর ইউনিয়নের পর পর ৪ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এডভোকেট আবদুল খালেক চৌধুরী জানান, সমগ্র মহেশখালীর তান্ডব সরেজমিনে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খুবই হৃদয়বিদয়ক। তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রীর কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। ২৬ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বিধ্বস্ত মহেশখালীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। ওইসময় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশত জনকে ত্রান প্রদান করেন। উপস্থিত ছিলেন মহেশখালী কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীখি মার্মা জানান, কুতুবজোমের প্রথমিকভাবে কয়েকশত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ত্রাণ বিতরণ করেন। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে সকলের ত্রাণের আওতায় আনা হবে।