রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

আগামী রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩
তিন দিনের অবরোধে অচল দেশ
টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি শেষে ফের ‘৪৮ ঘণ্টার অবরোধ’ ঘোষণা করেছে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ  কর্মসূচি পালন করবে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া আজ শুক্রবার চলমান আন্দোলনে নিহত সাংবাদিক, শ্রমিকসহ নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।  বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে যোগাযোগে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। রাজধানীতে একদিকে যেমন গণপরিবহনের সংকট, সেই সঙ্গে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। আর লঞ্চ টার্মিনালে কিছু লঞ্চ ছাড়লেও যাত্রী তেমন ছিল না। বাইরে থেকে কাঁচামালসহ নানা পণ্য পরিবহনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। যদিও এর আগে গত সোমবার অবরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু থাকবে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককে বাড়তি টাকা খরচ করে যেতে হয়েছে গন্তব্যে। আর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় দূরপাল্লার বাস ছাড়ার সংখ্যা একেবারেই কম। কোনো কোনো জেলার বাস ছাড়ছে না স্টেশনগুলোতে। আর সকাল থেকে তিন থেকে চারটি লঞ্চ ছাড়লেও যাত্রী সংকটে লঞ্চ চলাচল খুবই কম।
বাংলা মোটরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. রিফাত। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বংশালে এসে দেখি বাসের সংখ্যা খুবই কম। সেখানে সকাল ৯টার দিকে বাসের জন্য অপেক্ষা করে ঘণ্টা পার। অল্পসংখ্যক বাস এলেও যাত্রীর চাপে ওঠা যায়নি। পরে কষ্ট করে বাংলা মোটরে আসতে হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে কথা হয় শিকড় পরিবহনের বাসের চালক রফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। যাত্রী নেই বললেই চলে। অবরোধের জন্য যাত্রী কম থাকায় পরিবহনও কম রাস্তায়। তেলের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হবে।’
সায়েদাবাদে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. আশরাফ বলেন, ‘দুদিন ধরে কাউন্টার খোলা। কিন্তু গাড়ি ছাড়ছে না। যাত্রীরও দেখা নেই। আশা করা যাচ্ছে কাল বিকেল থেকে গাড়ি চলতে পারে।’ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা ঘুরেও বাস পাচ্ছিলেন না পল্লব নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, অবরোধের প্রথম দিন গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে বরিশাল গিয়েছিলেন। সাকুরা পরিবহনের একটি মাত্র বাস ছিল সকালে। আর সেদিনই সেই বাসে রাতে ঢাকায় ফিরে আসেন। এখন ঝিনাইদহ যাওয়ার বাস পাচ্ছেন না। হৃদয় নামের আরেক ব্যক্তি দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বসে থেকেও সিলেটের বাস পাচ্ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘দোকানের মালামাল কেনার জন্য দুদিন আগে ট্রেনে ঢাকায় এসেছি।’
নরসিংদী থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে যাওয়ার জন্য পথে পথে ভোগান্তি সয়ে বিমানবন্দর এসেছেন সুমন মিয়া নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাসা থেকে নরসিংদী বাসস্টেশনে এসে দেখি বাস বন্ধ। কিন্তু আজ (বুধবার) না যেতে পারলে আটকা পড়ে যাব। তাই সিএনজি, লেগুনা, রিকশা এবং হেঁটে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে কষ্ট করে আসতে হলো বিমানবন্দরে।’
অবরোধের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের কোনো পিকেটিং চোখে পড়েনি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন বাস টার্মিনালে। গাবতলী এলাকায় সার্বিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে ফজর থেকে রুটিনমাফিক দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও মোটর শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।
অবরোধে গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া বেড়েছে। হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচির কারণে কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে পিকেটারদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। কিছু ট্রাক চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধের কারণে অধিকাংশ মালিক ট্রাক নামাচ্ছেন না। যারা রাস্তায় ট্রাক বের করতে রাজি হচ্ছেন তারাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে। পাশাপাশি ক্রেতা সংকটের কারণে সরবরাহকৃত সবজির কাক্সিক্ষত দাম মিলছে না।
গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে কমতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পটোলের মতো ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০, কচুরলতি ৮০, কচুরমুখী ৯০, চিচিঙ্গা ৭০ ও প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সদরঘাট সবজির পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘অবরোধের জন্য অনেক মালিক ট্রাক ভাড়ায় রাস্তায় বের করতে চাইছেন না। কম দূরত্বের রাস্তায় অনেকে রাজি হলে তাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। আবার বাজারে লোকজন কম থাকায় সবজির কাক্সিক্ষত দাম মিলছে না।’ ট্রাক শ্রমিকরা বলছেন, অবরোধের এ সময়ে দূরত্বের রাস্তায় পণ্য সরবরাহ করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তাই অনেক ট্রাক মালিক রাস্তায় ট্রাক নামছেন না। যারা এ সময় ট্রাক নিয়ে বের হচ্ছেন তারা কম দূরত্বের রাস্তায় পণ্য সরবরাহের কাজ করছেন। যার জন্য স্বাভাবিক ভাড়ার তুলনায় সামান্য ভাড়া বেড়েছে। মানিকগঞ্জের ট্রাক শ্রমিক অনিক জানান, অবরোধের এ সময়ে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ট্রাক নিয়ে আসতে অনেক জায়গায় পিকেটারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। যারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় ট্রাক নামাচ্ছেন তারা সামান্য কিছু ভাড়া বাড়িয়েছেন, যা সবজির বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন না। অবরোধের নামে জনভোগান্তি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশে হরতাল-অবরোধ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হুটহাট গণপরবিহনে আগুন ধরিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে যারা রাজনীতি করেন, তাদের রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের জন্য।’
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, সকাল থেকে তিন-চারটি লঞ্চ ছাড়া হয়েছে। সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টার্মিনালেও তো যাত্রী নেই। যাত্রী থাকলে লঞ্চ চলাচল করতে তো কোনো সমস্যা নেই। এখন তেলের টাকাই যদি না উঠে, তাহলে লঞ্চ কীভাবে ছাড়ব।’ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাস চলছে। তবে যাত্রী কম থাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। আর অবরোধে আমাদের সমিতি থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ যাত্রী থাকলে বাস চলবেই বলে দাবি করেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com