একতরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের দুর্বার আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশি তফসিলে বাংলাদেশে একতরফা কোন নির্বাচন হবে না। জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে। শনিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সারাদেশে চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম ভয়াবহ মামলাবাজি আর আটক বাণিজ্য এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলার দৃশ্যপট অভিন্ন। এই গায়েবি মামলা গ্রেপ্তার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নিশিরাতের সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে বেপরোয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার বাণিজ্যের তাণ্ডবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বল জনপদে কেউ বাড়িঘরে থাকতে পারছে না।
ফলে ব্যবসা বাণিজ্য, কাজকর্ম করতে পারছে না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় অসংখ্য পরিবারকে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। পুলিশের এখন পৌষ মাস, আর জাতির সর্বনাশ।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটক করে কারো কাছ থেকে ১ লাখ, কারো কাছ থেকে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে মিথ্যা মামলায় জেলখানায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশের জেলখানাগুলোতে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বিরোধী দলের নেতাকর্মীতে উপচে পড়ছে। মহা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার স্বজন আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের লাইসেন্স দিয়েছে শেখ হাসিনা।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা গতকাল অকপটে স্বীকার করেছেন, অস্ত্র হাতে এবং রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার সিংহাসন দখল করে রেখেছেন। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় তিনি বলেছেন, অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না। বাংলাদেশে সরকার গঠন হবে ভোটের মধ্য দিয়েই। কথায় বলে-ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেয়া যায় না। সত্য কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ই।
রিজভী আরও বলেন, পুলিশকে নেকড়ের মতো জনগণের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিস্ময়কর অপতৎপরতায় প্রমাণিত হচ্ছে- শেখ হাসিনার সরকার একতরফা নির্বাচন ঘিরে এক সর্বনাশা নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ পরিস্থিতি তৈরি করতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। অতীতের মতোই সারা বাংলাদেশের জনগণকে বন্দী করে, গৃহছাড়া করে ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, হামলা নির্যাতন এবং পাইকারি গ্রেপ্তারের চিরুনি অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি বলেন, কার্যত দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন দু:সহ জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দেয়া হচ্ছে না, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে তাদেরকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তবে এতোসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না।
এসময় রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য সারাদেশের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।