সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

ঈমানের প্রকৃত অর্থ

মিজান ইবনে মোবারক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

হাদিসে জিবরাইলে নবীজী সা:-এর কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল, ইসলাম কী? এর উত্তরে নবীজী সা: পাঁচটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করলেন। নবীজীকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন, ঈমান কী? নবীজী সা: বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি আল্লাহ তায়ালার উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর, কেয়ামত দিনের উপর এবং তাকদিরের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে’ (মুসলিম : ৮)।
ঈমান হলো একটি নূর। যা নবীজী সা:-কে সত্যায়ন করার মাধ্যমে অন্তরে চলে আসে। যখন এই নূর অন্তরে আসে তখন আল্লাহর সাথে কুফরি করা, তার অবাধ্য হওয়া, জাহেলি প্রথার প্রতি আসক্ততা সব অন্তর থেকে দূর হয়ে যায় এবং দৃষ্টির অগোচরে থাকা সেসব বিষয়কে সত্য মনে করা হয়- যা সম্পর্কে নবীজী সা: সংবাদ দিয়েছেন। নবীজী বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনীত দ্বীন ও শরিয়তের অধীন না হবে’ (মেশকাত : ১৬৭)।
নবীজীর আনীত দ্বীনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি বিষয় রয়েছে। পুরো দ্বীনের সারাংশ রয়েছে এই ছয়টি বিষয়ের মধ্যে।
১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনা: আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর সত্তা ও সিফাতের মধ্যে একক বোঝা। তিনি স্বীয় অস্তিত্বে, নিজের সত্তা ও গুণাবলির মধ্যে সব ধরনের ত্রুটি ও দোষ থেকে মুক্ত। তিনি সব পরিপূর্ণতার গুণে গুণান্বিত। সৃষ্টির সব বস্তু তার ইচ্ছার অনুগামী। সব কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কখনোই কারো মুখাপেক্ষী নন। সৃষ্টির সব কর্তৃত্ব তাঁর আয়ত্তে। তাঁর কোনো শরিক নেই, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই।
২. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা: ফেরেশতারা আল্লাহর নূরানী এক সৃষ্টি। তারা কখনোই আল্লাহর অবাধ্য হয় না। যেই হুকুম তাদের দেয়া হয়, তা তারা একনিষ্ঠভাবে পালন করে। যাকে যে কাজের জন্য নির্দিষ্ট করা হয় সে এক মুহূর্তের জন্যও তা পালনে অবাধ্য হয় না; বরং পূর্ণাঙ্গভাবে তা পালন করে।
৩. নবী-রাসূলদের ওপর ঈমান আনা: নবী-রাসূলদের ওপর ঈমান আনা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে হেদায়েত দান, তাদেরকে নিজের সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টির কাজ সম্পর্কে অবগত করার জন্য মানুষদের মধ্যে থেকে কিছু বিশেষ বান্দাকে মনোনীত করেছেন। তাদেরকে নবী এবং রাসূল বলে। বান্দাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রদত্ত সংবাদ নবী রাসূলদের মাধ্যমে পৌঁছে। সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম আ: এবং সর্বশেষ নবী আমাদের রাসূল সা:। আমাদের নবীর পরে আর কোনো ব্যক্তি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হবেন না; বরং নবীজীর আনীত দ্বীনই কেয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে।
৪. কিতাবের ওপর ঈমান আনা: কিতাবের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো, নবীদের মাধ্যমে বান্দাদেরকে হেদায়েতের জন্য অনেক আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে। এর মধ্যে চারটি কিতাব খুবই প্রসিদ্ধ ও পরিচিত। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন। কুরআন সর্বশেষ হেদায়েতনামা, যা বান্দাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। কুরআনের অনুসরণ করা প্রতিটি মানুষের উপর আবশ্যক। এতে মানুষের সফলতা ও মুক্তির পথ রয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ কিতাবের সাথে বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে কখনোই সফলকাম সফল হবে না।
৫. কেয়ামতের উপর ঈমান আনা: কেয়ামতের উপর ঈমান আনার অর্থ হলো, এমন একটা সময় আসবে যখন পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আসমান জমিন ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর আল্লাহ তায়ালা সবাইকে জীবিত করবেন। দুনিয়াতে যে যত ভালো-মন্দ কাজ করেছে তার হিসাব-নিকাশ হবে। আমলনামা পরিমাপ করার জন্য মিজানের পাল্লা কায়েম করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির ভালো-মন্দ আমল তাতে উত্তোলন করা হবে। যে ব্যক্তির নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে, তার আল্লাহর সন্তুষ্টি মেলবে। সে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যে থাকবে। তাঁর নিকটবর্তী স্থানে থাকবে। যাকে জান্নাত বলা হয়।
যার গুনাহের পাল্লা ভারী হবে, সে আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির মধ্যে থাকবে। আর সে গ্রেফতার হয়ে আল্লাহ তায়ালার জেলখানায় তথা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। কাফের এবং বেইমান লোক চিরদিনের জন্য জাহান্নামে থাকবে। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি অন্যের ওপর সামান্যতম জুলুম করেছে তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে, তার সাথে খারাপ আচরণ করা হবে এবং তাকে অসম্মান করা হবে। কেয়ামতের দিন মাজলুমকে জালিমের থেকে পরিপূর্ণ বদলা দেয়া হবে। মোটকথা, আল্লাহ তায়ালার ইনসাফের দিনের নাম কেয়ামত। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার জীবনের সমস্ত হিসাব দিতে হবে। সে দিন কারো প্রতি সামান্যতমও জুলুম করা হবে না।
৬. তাকদিরের প্রতি ঈমান আনা: তাকদিরের প্রতি ঈমান আনার উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়ার সব কিছু নিজ থেকে চলাচল করে না। শক্তিধর সত্তা সব কিছু চালনা করেন। এই পৃথিবীতে আনন্দ-বেদনা, ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটে সব আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, তাঁর কুদরত এবং তাঁর হেকমতে সংঘটিত হয়। সৃষ্টির সামান্য থেকে সামান্য জিনিসের ইলমও সেই সর্বজ্ঞ এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সত্তার ইলমে বিদ্যমান। পৃথিবী সৃষ্টির বহু আগে এর সব অবস্থা তিনি লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। পৃথিবীর যা কিছু বাস্তবতায় আসে, তা সে মোতাবেক সামনে আসে। তাঁর কুদরত ও ইচ্ছায় সামনে আসে। মোটকথা, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির বহু আগেই যে শৃঙ্খলায় পৃথিবী পরিচালনা ব্যবস্থা সাজিয়ে রেখেছিলেন, সেই শৃঙ্খলা ব্যবস্থাতেই সব চলছে (আপ কে মাসায়েল আরো উনকা হলো-থেকে অনূদিত)। লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া রশিদিয়া এমদাদুল উলুম, গৌরনদী, বরিশাল




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com