ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলা বর্ষণে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় নিহত হচ্ছেন ২ জন মা এবং প্রতি দুই ঘণ্টায় প্রাণ হারাচ্ছেন ৭ জন নারী। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক দূত সিমা সামি বাওয়াস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বুধবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিমা। সেখানে তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত গত ১৫ বছরে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে যতসংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে নারী ও মেয়েদের হার ছিল ১৪ শতাংশেরও কম।
‘কিন্তু ৭ অক্টোবরের পর থেকে সেখানে বেসামরিক পুরুষ ও নারী নিহতের পরিসংখ্যান পুরোপুরি উল্টে গেছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় যত বেসামরিক নিহত হয়েছেন, তাদের ৬৭ শতাংশই নারী ও শিশু।’ নিরাপত্তা পরিষদের বুধবারের বৈঠকে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক তহবিল ইউএনএফপিএর নাতালিয়া কামেনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৮০ জন নারী সন্তান প্রসব করছেন এবং এই মুহূর্তে গাজা উপত্যকার অন্তত সাড়ে ৬ লাখ নারী ও মেয়ের তীব্রভাবে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত উপত্যকায় অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত নারীদের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৮ লাখে এবং কোনো না কোনোভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ লাখ ১০ হাজার নারী। নাতালিয়া কামেন বলেন, ‘গাজায় এখন যেসব শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, তাদের জীবন-মরণ পুরোপুরি অনিশ্চিত। প্রসূতি ও সন্তানসম্ভবা নারীরা স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় যতœ পাচ্ছেন না। সংঘাত কবলিত গাজার নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তা এবং দিনযাপন নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ আমরা এখানে বসে যা ভাবছি, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ।’ গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের এই হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত দেড় মাসে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫৩২ জনে। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সিমা সামি বাওয়াস বলেন, ‘গাজা উপত্যকার নারীরা আমাদের বলেছেন, অভিযান শুরুর পর থেকে তারা প্রার্থনা করছেন- গাজায় শান্তি ফিরে আসুক; আর যদি তা না আসে তাহলে যেন ঘুমের মধ্যে দ্রুত তাদের মৃত্যু ঘটে এবং সে সময় সন্তানরা যেন তাদের পাশে থাকে। ‘এই আধুনিক সময়ে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে যদি কোনো মা যদি এমন প্রার্থনা করেন- তাহলে আমরা মনে করি, আমাদের সবার লজ্জিত হওয়া উচিত।’ সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি