ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’
ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমিটি। ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ্য করে বলা হয়েছে,‘এই বিষয়ে ভারতকে ফের কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) তাদের রিপোর্টে বলেছে, ২০২২ সালে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। ফলে বাইডেন প্রশাসন যাতে ভারতকে এই বিষয়ে ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে থাকা একটি দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে, রিপোর্টে ওই সুপারিশও করা হয়েছে। কমিশনের আরো দাবি, আন্দোলনকারী, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের চুপ করাতে ভারতের পদক্ষেপগুলো ধর্মীয় স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা। ইউএসসিআইআরএফ-এর কমিশনার বলেছেন, ‘কানাডায় হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যা এবং আমেরিকায় গুরুপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে হত্যার চক্রান্তে ভারতের নাম যেভাবে জড়িয়েছে, তা খুবই বিরক্তির বিষয়।’ গত শনিবার পেশ করা আমেরিকান সংস্থার এই রিপোর্ট নিয়ে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনীতিকদের মতে, ভারত সরকারের তরফে নিয়মিতভাবেই এই ধরনের অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়ে থাকে। ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে- এমন অভিযোগ এনে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করতে এই ধরনের সুপারিশ এই প্রথমবার করছে না আমেরিকার সংস্থাটি। গত ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এই একই কথা বলে আসছে তারা। ২০২০ সালেই অবশ্য ভারত সরকার কমিশনের এই ধরনের বক্তব্যকে ‘একপেশে’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দিয়েছে।’
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন ‘ভারতকে উদ্বেগের দেশ ঘোষণার অনুরোধ মার্কিন সংস্থার’ শিরোনামে একটি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে,‘মার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের অধীনে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ ঘোষণার জন্য আবারো বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষক সংস্থা। গত শুক্রবার এ আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, ভারত বিদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের স্বাধীন কমিশন ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) বলেছে, ‘বিদেশে আন্দোলনকারী, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের চুপ করানোর ভারত সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর একটি গুরুতর হুমকি। ভারতের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলমান ধর্মীয় বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য ভারতকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ ঘোষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছে ইউএসসিআইআরএফ।’
ইউএসসিআইআরএফ এর কমিশনার স্টিভেন শ্লেক কানাডায় শিখ আন্দোলনকারী হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের সাথে এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরেক শিখ আন্দোলনকারী গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চক্রান্তকে সাথে ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের জানানো অনুরোধে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে কোনো বৈষ্যম্যের কথা ভারত সরকার নিয়মিত অস্বীকার করে আসছে।
চলতি মাসে ম্যানহ্যাটনের ফেডারেল কৌঁসুলি জানান, ভারতের উত্তরা লে একটি সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালানো নিউ ইয়র্কের এক বাসিন্দাকে হত্যার চক্রান্তে এক ভারতীয় নাগরিক ভারত সরকারের এক অনামা কর্মীর সাথে কাজ করছিলেন। ভারতের সরকার এই চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারত ও বাইডেন প্রশাসন উভয়ের জন্য এই ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। চীনের উত্থান মোকাবেলায় উভয়ে একটি গভীর মিত্রতা গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে। এই সময় এ ধরনের কোনো বিষয় সামনে আসা উভয়ের জন্য বিব্রতকর। ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের অধীনে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ ঘোষণার জন্য তারা ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে আসছে। এ ঘোষণা দেয়া হলে ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বা বিভিন্ন সুবিধা প্রত্যাহার করতে পারবে ওয়াশিংটন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।’