শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত বেরোবিতে চাকরি হল শহীদ আবু সাঈদের বোনের সাহিত্যে নোবেল জিতলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাবের হোসেন কীভাবে জামিনে মুক্তি পেলেন, প্রশ্ন রিজভীর এবি পার্টির নতুন আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব (মিনার) দেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে পূজার আনন্দ উপভোগ করা অন্যরকম ব্যাপার: মন্দিরা চক্রবর্তী টানা ছুটিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট গণতন্ত্র মানে মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা : তারেক রহমান ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যোগ দিয়েছে বলিভিয়া বিএনপির সভামঞ্চে সবাই যেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী!

কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড, আইন অমান্য করে নদী ও ফোরশোর ভরাটের অভিযোগ

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের একুতা মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদী ও ফোরশোর দখলের অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে। তবে এ ব্যপারে সম্পূর্ণ উদাসীন বিআইডব্লিউটিএ। শীতলক্ষ্যা নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি প্রধান শাখা নদী। ১০৮ কি.মি. দীর্ঘ শীতলক্ষ্যা নদীটি গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার কালাগাচিয়া ইউনিয়নে ধলেশ^রী নদীতে পতিত হয়েছে। চরসিন্দুর ব্রিজ সংলগ্ন একুতা মৌজায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড বিশাল এলাকা জুড়ে ফোরশোর ভরাট করে ফেলেছে এবং নদীর উপর কংক্রিটের দীর্ঘ দেয়াল তৈরী করা হয়েছে। আবার কয়েকজন শ্রমিক হাতুরি দিয়ে সেই দেয়াল ভাঙ্গছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী সালাম জানান, ‘বিআইডব্লিউটিএ অভিযান চালানোর জন্য আসছিলেন, পরে আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দেয়ালটি ভাঙ্গবে বলে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছেন।’ তবে ফোরশোর ভরাট বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের অনুকলে বিআইডব্লিউটিএ-এর কিছু শর্ত সাপেক্ষে একটি অনুমোদনও রয়েছে। ঘোড়াশাল নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন একুতা মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের নিজস্ব জায়গায় পাকা আরসিসি জেটি ৮০০ বর্গফুট বা ৭৪ বর্গ মিটারের অনুমোদন রয়েছে। পরিবাহিত মালামাল উঠানামার জন্য ২৪০০০০ ঘনফুট বেসিন তৈরীরও অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদন রয়েছে ১৫৫০০০ বর্গফুট বা ৩৫৬ শতাংশ ফোরশোর ব্যবহারের। অনুমোদনের সাথে ২২টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। শর্ত ভঙ্গ হলে অনুমোদনটি বাতিলও হতে পারে বলে সতর্ক করা আছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শর্ত নং ২, ১৭, ১৯ ও ২০ ভঙ্গ করে ফোরশোর ভরাট ও নদীর উপর কংক্রিটের দেয়াল তৈরী করেছে। নদীর তীর ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন করে চলেছে কাজ। এ ব্যপারে বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ জানান, কয়েকদিন আগে বিয়য়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে তারা কথা বলেছেন। সেই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাফছা নাদিয়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ২ লক্ষাধিক টাকাও জরিমানা করা হয়েছে। তবে পূনরায় তারা আবারও নদী ও ফোরশোর ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করছে। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বিআইডব্লিউটিএ ঘোড়াশাল নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূর হোসেনকে সকালে প্রথমবার ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে দ্বিতীয়বার ফোন দিলে সিরিভ করেন এবং পরিচয় জেনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অশোভন আচরণ করেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আপনি কেন ফোন দিয়েছেন? আপনি যে পত্রিকার এবং যত বড় সাংবাদিকই হউন আমাকে আর কখনো ফোন দিবেন না বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তবে এ ব্যাপারে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা বন্দরের পরিচালক সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নদী দখলের বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া নেওয়ার পর কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে তারা নিজেরাই নদী দখলকৃত স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলবে বলে তিনি জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে জনা যায়, জেটি নির্মাণের জন্য আনুমানিক ২ বিঘা ও ফোরশোরে প্রায় ৩৫৬ শতাংশ জমি ভরাট করা হয়েছে যা অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। কালীগঞ্জ ইকোনোমিক জোনের জন্য ৪২.৯৬ একর জমির জন্য নামজারি করা হয়েছে। কিন্তু এই নামে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অবস্থানগত ছাড়পত্র নেয়া হয়নি। তবে কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড ও প্যাকমেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১১৮.৯৫ শতাংশ বা ১.১৯ একর জমি ভূমি উন্নয়নের জন্য পরিবেশগত অবস্থানগত ছাড়পত্র/পরিবেশ অধিদপ্তরের বৈধতা রয়েছে। প্রায় ২২ একর ভূমি ভরাটের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড নদী দখল করেছে তা সত্য। আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি, এ বিষয়ে মামলা হবে। বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, নদী ও নদীর ফোরশোর এলাকা আইন অনুসারে জলাধার হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এ প্রতিষ্ঠানটি যদি নদী ও ফোরশোর ভরাট করে থাকে তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে আমাদের দ্বিপক্ষিয় সমঝোতা হয়েছে। খুব শীঘ্রই শীতলক্ষ্যা নদী কালীগঞ্জ এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করা হবে। একই সাথে নদী তীরে যে সকল শিল্প কারাখানা নদীকে দখল করে রেখেছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com