যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ দিনে একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকসহ ৮৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার আরও ৮ বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নিউইয়র্কে সাত পুরুষ ও মিশিগানে একজন নারী মারা গেছেন। প্রাণঘাতী করোনায় এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮৬ বাংলাদেশী প্রাণ হারালেন। তাদের মধ্যে নিউইয়র্কে ৮১ জন, নিউজার্সিতে চার ও মিশিগানে একজন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
জানা গেছে, নর্থ ব্রঙ্কস সেন্টাল হাসপাতালে সোমবার সকালে মারা যান ব্রঙ্কসের বাসিন্দা চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধা (পারিবারিক আপত্তির ফলে নাম প্রকাশ করা গেল না)। ৬৭ বছরের এই চিকিৎসক ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি স্বাস্থ্য বিভাগের মহামারী রোগ বিশেষজ্ঞ।
এদিকে এই মহামারীর সঙ্গে লড়াই করে এদিন ভোরে এলমহাস্ট্র হাসপাতালে মারা যান বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
জেএফকে টার্মিনাল ৫-এর এয়ারওয়ে কর্মরত জ্যামাইকার বাসিন্দা মারা গেছেন জ্যামাইকা হাসপাতালে। তার বড় ভাই ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন।
দুপুরে মারা যান ব্রঙ্কসের বাসিন্দা কুষ্টিয়া জেলা সমিতির উপদেষ্টা । ভোরে ওজন পার্কে মারা যান ৭৭ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী। ব্রুকলিনে মারা যান বেগমগঞ্জ ওয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ষাটোর্ধ্ব আরও একজন মারা গেছেন ব্রুকলিনে। এদিন দুপুরে মিশিগানের হ্যামট্রামিক সিটিতে করোনায় আক্রান্ত এক প্রবীণ বাংলাদেশী নারী (৭৩) মারা যান। নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার) ১ হাজার ২৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৭১ জনে। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ হাজার ৬৭১ জন। ওয়ার্ল্ডওমিটার ওয়েবসাইট এই তথ্য জানিয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণরোধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বাড়িতেই দিন কাটাতে হচ্ছে ৯০ শতাংশের অধিক মার্কিনিদের। তবে হোয়াইট হাউসের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ‘বাড়িতে থাকা (স্টে অ্যাট হোম)’ নীতি পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করা হলেও এক থেকে প্রায় আড়াই লাখ (২ লাখ ৪০ হাজার) আমেরিকান মারা যাবে করোনায়।
দেশটিতে করোনা সবচেয়ে বেশি নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৯১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশ। মারা গেছে ৪ হাজার ৭৫৮ জন, যা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক।
এদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪ হাজার ৭৫৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯১৬ জন। এদের মধ্যে ৮৬ জন বাংলাদেশীও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত অশীতিপর এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার নিউ ইয়র্ক সিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এটিই প্রথম মৃত্যু। তবে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া দেশটিতে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪০ জন। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এছাড়াও নিউইয়র্কে লকডাউনের সময়সীমা আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে জরিমানার পরিমাণও। সামাজিক দূরত্ব না মানলে এক হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানার নিয়ম চালু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সোমবার নিউইয়র্কের গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুয়োমো জানিয়েছেন, অঙ্গরাজ্যটিতে মৃত্যুহার এবং আক্রান্তের সংখ্যা টানা দ্বিতীয়দিনের মতো কমেছে। তার আশা, হয়তো ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করে এসেছে নিউ ইয়র্ক।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে অশীতিপর এক নারীর মৃত্যু হয়। নিউইয়র্ক সিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এটিই প্রথম মৃত্যু।
ই-খ/খবরপত্র