বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
উলিপুরে জাতীয় ফুল শাপলার আদলে ধানক্ষেত বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় ও সাহসী, সকলকে ধৈর্যের সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে-জেলা প্রশাসক পটুয়াখালী কমলগঞ্জে সীমানা পিলার উপরে ফেলে ভূমি জবরদখল করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা হলো জামায়াতের সাত শহীদের জন্মভূমি-অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে সচেতনতা সভা পাবনায় র‌্যাবের অভিযানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলার ২ আসামী গ্রেফতার নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এম এ ফয়েজের বিদায় সংবর্ধনা বাগেরহাট প্রেস ক্লাবকে সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে-বিশেষ সাধারণ সভায় বক্তারা নেত্রকোনায় বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত পটুয়াখালীতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোল টেবিল বৈঠক

বরিশালে তিনদফা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে কৃষিযোদ্ধাদের রেকর্ড

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৪

তিন দফার প্রকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধা এবার প্রায় ২৩ লাখ টন আমন চাল ঘরে তোলার পরও গত বছরের তুলনায় এবার ভাল দাম পাচ্ছেন না। অথচ বাজারে চালের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অন্তত ২০ ভাগ বেশী। কিন্তু একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাথে লড়াই করেই এবারো বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ঘরে তুলতে হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্যশষ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে সদ্য সমাপ্ত ‘খরিপ-২’ মৌসুমে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৩ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে কৃষিযোদ্ধা গন ৮ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৫ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন করেন। যা ছিল লক্ষামাত্রার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত। কিন্তু এ বাড়তি জমিতে আমনের আবাদ হলেও বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা একের পর এক ঘূর্ণিঝড় বারবারই বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে সব বাঁধা অতিক্রম করে সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে ২২ লাখ ৮ হাজার ৫৫০ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৩ হাজার টন অতিরিক্ত ২২ লাখ ৮১ হাজার ২১২ টন আমন চাল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বরিশাল অঞ্চলের কৃষকগন। তবে গত বছর বরিশালে প্রতিমন আমন ধান যেখানে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রী হয়েছে, সেখানে এবারো মৌসুমের শুরুতে তা ১ হাজার থেকে এখন মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে ১২শ টাকার বেশী দাম পাচ্ছেন না কৃষকযোদ্ধারা। অথচ গত বছরের এসময়ে যে চালের কেজি ছিল ৪৫ টাকা, তা এখন ৫০ টাকার ওপরে। ভাল-মধ্যম মানের মিনিকেট চালের কেজি এখন ৬৫-৬৮ টাকা কেজি। বোরো মৌসুমেও ধানের দাম না বাড়লেও কৃষকের জমির ধান ফরিয়াদের হাতে যাবার পরেই চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আমন মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। অথচ প্রতিবছরই ধানের উৎপাদন ব্যায় বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছেনা কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা ধানের দাম। এ অঞ্চলে যারা ধান উৎপাদন করে তারা মরে, কিন্তু টাকা যায় মহাজন ফরিয়া আর মিল মালিকদের ঘরে। অপরদিকে এখনো বরিশাল অঞ্চলে আমনে হাইব্রীড জাতের ধানের অবাদ খুবই সিমিত। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৮ লাখ ৮১ হাজার হেক্টরের মধ্যে হাইব্রীঢ জাতের ধান ছিল ২৫ হাজার হেক্টরেরও কম। এমনকি এ অঞ্চলে এখনো ৩ লক্ষাধিক হেক্টরে সনাতন স্থানীয় জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে। যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন মাত্র ১.৭৩ টনের মত। এমনকি হাইব্রীড জাতের উৎপাদনও ৪ টনের নিচে । অথচ ‘ব্রি’ উদ্ভাবিত আমাদের জলবায়ু উপযোগী হাইব্রীড জাতের বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি অনুসরন করলে এ অঞ্চলেও হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনায়াসেই সাড়ে ৪ টনেরও বেশী হতে পাড়ে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে এ অঞ্চলে যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদ হয়েছে, তার গড় উৎপাদনও ২.৮৯ টন হলেও ভালমানের বীজ ও উন্নত প্রযুক্তি অনুসরন করে তা খুব সহজেই সোয়া ৩টনে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছেন মহলটি। তবে এবার কয়েক দফার প্রকৃতিক বিপর্যয় আমনের ফলনকে কিছুটা ব্যাহত করেছে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসান অধিদপ্তর-ডিএই’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন। তবে বরিশাল অঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল- আমনের আবাদ ও উৎপাদনে এখনো পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। তার পারেও এ অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধা গন অনেকটা মরনপন লড়াই করেই ফসল ঘরে তুলছেন। গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর মাঝারী বর্ষণে আমনের কোন ক্ষতি না হলেও ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে বরিশাল উপক’লে আছড়ে পড়ায় আমনের যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়েছে। ঐ ঝড়ের প্রভাবে মাত্র ১২ ঘন্টায় বরিশালে ২শ মিলি বৃষ্টি হয়েছিল। এর ২২ দিনের মাথায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ বরিশাল উপক’ল থেকে সাড়ে ১২শ কিলোমিটার দুরে ভারতের অন্ধ্র উপক’লে আঘাত হানলেও তার প্রভাবে টানা ৫ দিনের মেঘলা আবহাওয়ার সাথে অগ্রহায়নের হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত আমনের আগের ক্ষতিকে আরো তড়ান্বিত করে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন জানিয়েছেন।
তবে সব প্রতিকুলতা অতিক্রম করেই এবার বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ২৩ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীল মহল। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৯.৯০লাখ হেক্টরে আবাদ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে ৬০ লক্ষাধিক হেক্টরে আমন আবাদ সম্পন্ন হওয়ায় ১.৭২ কোটি টনের স্থলে পৌনে ২ কোটি টনেরও বেশী আমন চাল উৎপাদন হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারনা দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএই’র একটি দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com