ভারত মহাসাগরের সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের ব্যবহৃত মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েনকে রুখে দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ে জলদস্যুরা এ জাহাজটি ব্যবহার করেছিল। গতকাল শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌবাহিনী সোমালি জলদস্যুদের দস্যুতার কাজে ব্যবহৃত কার্গো জাহাজ রুয়েনকে বাধা দিয়েছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ মাল্টিজ পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজটিকে বাধা দেয়। জলদস্যুদের দখলে থাকা জাহাজটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজে গুলি চালায়। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজে থাকা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছে এবং জাহাজটিতে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বৃহস্পতিবার জানায়, সোমালি জলদস্যুরা গত ডিসেম্বরে মাল্টিজ জাহাজ রুয়েন দখল করে। তারা এ সপ্তাহে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলে এটি ব্যবহার করে থাকতে পারে। ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে বলছে, এমভি আবদুল্লাহকে যখন ছিনতাই করা হয়, তখন রুয়েন মাত্র ২৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল এবং পূর্বদিকেই যাচ্ছিল। মেরিটাইম সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা এ সংস্থাগুলোর শঙ্কা, মাল্টিজ জাহাজ রুয়েনকে জলদস্যুরা ছিনতাইয়ের কাজে মাদার ভ্যাসেল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও একজন বাদে ওই জাহাজের ১৬ নাবিক এখনো পণবন্দি আছেন।
ইইউ ন্যাভফোর জানিয়েছে, রুয়েন থেকে এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করার অপারেশন পরিচালনার অর্থ হলো, জলদস্যুরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত জলদস্যুরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠলেই এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করে। মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টার-হর্ন অফ আফ্রিকা (ঊটঘঅঠঋঙজ) এর পরিকল্পনা ও সমন্বয় কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এডেন উপসাগর এবং সোমালিয়া উপকূল থেকে ২০টি জাহাজ হাইজ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সে সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে পণবন্দি হয় ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সোমালিয়ার গারাকাড উপকূল থেকে ২০ মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করে। পরে সেটি আরও এগিয়ে উপকূলের ৭ মাইলের মধ্যে অবস্থান নেয়। কিন্তু শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ জাহাজটি আরারও চলতে শুরু করে।
সর্বশেষ ২৩ নাবিকসহ পণবন্দি বাংলাদেশি জাহাজটিকে সোমালিয়ার গারাকাড থেকে গোদবজিরান উপকূলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগের অবস্থান থেকে এটি প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে। বর্তমানে জাহাজটি উপকূল থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।