সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

দেশে ভোটাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই তারই প্রতিচ্ছবি সুপ্রিম কোর্ট বার : ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সাবেক সম্পাদক ও নির্বাচনে বিএনপি প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। মুক্তিপাওয়ার পর তিনি দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে ফিরে আসেন। আইনজীবী ও সহকর্মীদের ফুলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন। মুক্তি পাওয়ার পর কী কারণে, কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো এবং রিমান্ডে নেয়া হলো সে বিষয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেন সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও সাবেক কূটনীতিক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, আমাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে এই নির্বাচনে আমাকে এবং আমাদের প্যানেলকে পরাজিত করাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, দেশের মানুষের আজকে ভোটাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই তার একটা প্রতিচ্ছবি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। গত দুই বছরের ভোট ডাকাতির ধারাবাহিকতায় এবারো তার মতো ভোট ডাকাতি করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেভাবে আছে সেভাবে।
প্রশ্ন : ৯ মার্চ সন্ধ্যায় যখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোট গণনা চলছিল তখন একজন সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার পরও কেন তাকে ও আপনাকে গ্রেফতার করা হয়?
ব্যারিস্টার কাজল : আমি ব্যক্তিগতভাবে হাজার হাজার মানুষের মামলা করেছি। বিচারপ্রার্থী মানুষের মামলা দেখলে আমরা কোনটা মিথ্যা কোনটা সত্য এটা, আগে থেকে আঁচ করতে পারি। ঘটনা যার ভিডিও ফুটেজ আছে, সমস্ত কিছুর পরে, একটা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় আমাকে চার দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা হয়েছে। এই যে দেশে আইনের শাসন নেই, ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছা করলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করে যেটা আমরা সবসময় বলে থাকি। আমি হচ্ছি এ রকম হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও বিচারিক সন্ত্রাসের সর্বশেষ শিকার।
প্রশ্ন : সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে তিনজন সম্পাদক প্রার্থীর মধ্যে শুধু আপনাকে কেন জেলে নেয়া হলো এবং রিমান্ডে নেয়া হলো?
ব্যারিস্টার কাজল : সারা দেশটা একটা বৃহৎ কারাগার। আমি যেহেতু বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত সে কারণেই আমার ওপর এই খড়গটা নেমে এসেছে। আমি মনে করি সারা দেশে অসংখ্য বিএনপি বা বিরোধী দলের নেতাকর্মী যে নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিচারিক হয়রানির শিকার হয় আমি হচ্ছি তার সর্বশেষ শিকার। আমি জেলখানায় অসংখ্য মানুষকে এভাবে দেখেছি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির বিষয়টা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের বিষয়টা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য তাদের গৃহদাহ বা নিজেদের মধ্যে গৃহবিবাদের বিষয়টাকে অন্যদিকে আড়াল করার জন্যে আমাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এটা আওয়ামী লীগের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
প্রশ্ন : গ্রেফতারের সময়, রিমান্ডে এবং কারাগারে কোনো প্রকার হয়রানি করা হয়েছে কি?
ব্যারিস্টার কাজল : প্রথমে দেখতে হবে এ ধরনের মিথ্যা মামলায় আমার সম্পৃক্ততা কি? আমি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট। আমি একজন ব্যারিস্টার। আমি একজন সাবেক কূটনীতিক। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য। এই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পরপর তিন বার নির্বাচিত সদস্য। আমি এবারো নির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। মূল ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও এই যে আমাকে রিমান্ডে নেয়া এইটাই তো আইনের শাসনের বড্ড বরখেলাপ। মানুষের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমি কি চোর, ডাকাত, কোনো খুন করেছি বা অন্যায় করেছি? আমাকে কেন রিমান্ডে নিতে হবে? এই রিমান্ড চাওয়াটা, এটা হচ্ছে বিচারিক সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং সরকার যে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী মতকে দমন করার যে অপকৌশল দীর্ঘদিন থেকে চালিয়ে আসছে তারই শিকার হয়েছি আমি। আমাকে গ্রেফতার করা, রিমান্ডে নেয়া এবং হাতকড়া পরানো এটা যারা করেছেন তারা মনে করতে পারেন সাময়িকভাবে একজন বিএনপির কর্মীকে তারা হেনস্তা করল। কিন্তু মূল বিচারে যদি বিবেচনা করেন যে আমি একজন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী, একজন সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক। যাদের ষড়যন্ত্রের কারণে এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, আজকে তারা যদি আইনজীবী হয়ে করেন তাদের মাথা হেট হয়েছে। আমার এ কারণে মাথা হেট হয়নি। আইনজীবীদের অধিকার রক্ষার জন্য আমি সবসময় আন্দোলন করেছি। এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাকে নিবৃত করা যাবে না।
প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা প্রবাহে আপনাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া হয় সেটা কি উচ্চ আদালতের নজরে নেয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন?
ব্যারিস্টার কাজল : আমার মনে হয় আমাদের দেশের আদালত কিন্তু অনেক বিষয় সুয়োমোটো নজরে নেন। এই ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালতের যারা বিচারপতি আছেন তাদের অনেকেই সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য ছিলেন। অনেকেই এই সমিতির দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। তারা জানেন এখানে কি হয়েছে। এখানে বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাননীয় বিচারপতিরা অনেক সময় সুয়োমোটো রুল ইস্যু করে থাকেন। আমি মনে করি তারা এই বিষয়টিকে বিচারিক পর্যবেক্ষণে জুডিশিয়াল নোটিশে আনতে পারতেন। তারা করেননি এটা তাদের ব্যাপার। এটা করলে বরং আমাদের বিচার বিভাগ সমৃদ্ধ হতো। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও সম্মান বাড়ত।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তি পান সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এর আগে বুধবার বিচারপতি মো: রেজাউল হক ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বে তাকে স্থায়ী জামিন দেন।
গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনের তোপখানা রোডে নিজ চেম্বার থেকে ব্যারিস্টার কাজলকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদে কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে ৭ মার্চ রাতে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকীকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় পরদিন ৮ মার্চ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীসহ ২০ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়। নাহিদ সুলতানা যুথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। এ মামলায় ব্যারিস্টার কাজলসহ ছয় আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com