সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ সাংবাদিক গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে: আমীর খসরু

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এখন বিশেষ সাংবাদিক গোষ্ঠীর সৃষ্টি করা হয়েছে, যারা ‘ওয়াচডগ’ হওয়ার পরিবর্তে ‘ল্যাপডগ’ এ পরিণত হয়েছে। ড়শ শুক্রবার বিকেলে বন্দর নগরীর একটি ক্যাফেতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে সিএমইউজে’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আমীর খসরু বলেন, “বাংলাদেশ রাষ্ট্র যেভাবে চলছে, রাষ্ট্রের অঙ্গগুলো যেভাবে চলছে, সাংবাদিকতা তার চেয়ে ভালো অবস্থানে নেই। বিশেষ বিশেষ সাংবাদিক গোষ্ঠী এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে, যারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, তাদের সাংবাদিকতা পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যারা চলে, তারা সাংবাদিকতা করতে পারে না। সাংবাদিকদের হতে হবে ওয়াচডগ। এখন তারা হয়ে গেছে ল্যাপডগ মানে কোলের কুকুর। ওরা ওয়াচডগের বদলে এখন ল্যাপডগ হয়ে গেছে বাংলাদেশে।”
আমীর খসরু বলেন, “যারা সাহস করে কথাবার্তা বলছে, লিখছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। যেসব সাংবাদিক সংগঠন, মিডিয়ার, কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে তারা কিন্তু এখন বড় চাপের মধ্যে আছে।
“ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এখনও যে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছে, বিশেষ করে আজ এখানে যারা আছে, এখানে অনেক সাংবাদিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক সাংবাদিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক বাধা অতিক্রম করে তারা কিন্তু করে যাচ্ছে, সাহসিকতার সাথে করে যাচ্ছে।“
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, “আগে ভারতে আমরা শুনতাম ইন্দিরা গান্ধীর ইমার্জেন্সির সময় সরকার থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল- একটু বাঁকা হয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলতে। কিন্তু তারা বাঁকা হয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। সরকার বলেছিল একটু ব্যাং হয়ে আমাদের পক্ষে লিখ, কিন্তু অতি উৎসাহী সাংবাদিকরা হামাগুড়ি দিচ্ছিল।
“বাংলাদেশ সরকার বলছে হামাগুড়ি দিতে, এরা এখন শুয়ে গেছে, সিজদায় পড়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার বলেছে হামাগুড়ি দাও, এরা সিজদায় পড়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবস্থা।”
আমীর খসরু বলেন, “আওয়ামী লীগের বেনিফিশিয়ারি সাংবাদিকরা ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ সাংবাদিকরা মুক্ত হতে চাচ্ছে। তারা মুক্তির পথ খুঁজছে। তারা যদি মুক্ত হতে না পারে এখন, তাহলে আগামী দিনে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বলে কোনোকিছু থাকবে না। সাংবাদিকতা পেশা বলে যে কিছু আছে, এটাও ভুলে যেতে হবে।”
‘গণতন্ত্র ফেরানোর’ দায়িত্ব বিএনপির ‘একার নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি সবাইকে বলি, বিএনপির একার দায়িত্ব না এটা। বিএনপি গুম হবে, খুন হবে, মৃত্যুর মুখে যাবে, চাকরি হারাবে, ব্যবসা হারাবে, শুধু বিএনপির একার দায়িত্ব না।
“সাংবাদিকদের দায়িত্ব আছে, পেশাজীবীদের দায়িত্ব আছে, সর্বস্তরের মানুষের আজ দায়িত্ব আছে। ৯৫ শতাংশ মানুষ যারা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তারা কিন্তু তাদের একটা দায়িত্ব পালন করেছে। বিএনপি এবং বিরোধী দলের ডাকে তারা দায়িত্ব পালন করেছে, তারা কথা বলেছে, ঘরে বসে কথা বলেছে।”
আমীর খসরু বলেন, “আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা ভোট করে জিততে পারেনি, তারাও বলছে ভোট হয়নি। আমি আর ডামি আর কী! কিছু কিছু আমি হেরে গেছে, কিছু কিছু ডামি হেরে গেছে। আমিও বলছে ভোট হয়নি, ডামিও বলছে ভোট হয়নি।
“আবার জাতীয় পার্টির মত যারা হালুয়া রুটির জন্য গিয়েছিল, তারাও বলেছে ভোট হয়নি। শেষপর্যন্ত একমাত্র শেখ হাসিনা এবং তার কিছু লোকজন বলছে ভোট হয়েছে।”
আমীর খসরু বলেন, “আজ সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ। সুশীল সমাজ যারা কথা বলত না, তারাও এখন কথা বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, ভোটে অংশগ্রহণ করলে বোধহয় ইমরান খানের মত কিছু হতে পারত।
“আরে পাকিস্তানে তো কেয়ারটেকার সরকার কাজ করছে, পাকিস্তানে তো এখনও বিচার বিভাগ কাজ করছে বহুলাংশে, পাকিস্তানের সব রাষ্ট্রীয় সংগঠন দখল করেনি শতভাগ। এজন্য পাকিস্তানে ওরা কিছু করতে পেরেছে। বাংলাদেশে আমরা না গিয়ে যেটা করতে পেরেছি, ৯৫ শতাংশ মানুষকে যে আমরা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি, এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা।”
তিনি বলেন, “বিএনপি ১৫ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলার পরও বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে, বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে তারা নিতে পারেনি, এটা আরেকটা সফলতা। আন্দোলনের দুই সফলতা। মানুষ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এ ভোটকে প্রত্যাখান করেছে।
“বিএনপি খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। বিএনপি আজ অনেক বেশি পরিণত। বিএনপি আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক বেশি শক্তিশালী দল। আমাদের এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
সিএমইউজে সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমানের স ালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম একটা দুর্বিষহ সংকটকাল পার করছে। গণমাধ্যমের চেপে ধরায় এর স্বাধীনতা এখন পুরোপুরি বিপন্ন। দু:শাসন পাকাপোক্ত করতে গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় প্রদর্শন, সাংবাদিক হত্যা, গ্রেফতার ,নির্যাতন চলছে।নানান কালা কানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা হয়ছে।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যমের হতে পারছে না। সত্য তুলে ধরতে না পারায় সংবাদমাধ্যম দিন দিন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। যা সংবাদমাধ্যমকে অস্তিত্বের সংকটে ধাবিত করছে। গণমাধ্যম সব সময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু কীভাবে জানি না, জনগণের সঙ্গে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কালে কালে সে দূরত্বটা বাড়ছেই শুধু। আমরা জানি না আমাদের মিডিয়া মালিকরা তা অনুধাবন করছেন কিনা! আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হচ্ছে গণতন্ত্রের সঙ্কট। গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা থাকে না তা আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশের গণমাধ্যম চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। মিডিয়া অত্বিত্ব সংকটে। সরকার, সরকারি দল ,সরকারি বাহিনী,আমলা, প্রভাবশালীরা মিডিয়ার কন্ঠরোধে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন সাংবাদিক নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে দেশে ৬০ সাংবাদিক খুন হয়েছে। ৪০০ মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। দেশে কালাকানুনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৩ তম। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের নীচে আমাদের অবস্থান। শুনে অবাক হবেন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২ ধাপ অবনমিত হয়েছে।
নগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, সিএমইউজের সাবেক সভাপতি ইস্কান্দার আলী চৌধুরী, শামসুল হক হায়দরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সাধারণ সম্পাদক ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, এ্যাবের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম,ডা. সারোয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com