শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংবাদ সম্মেলন
বান্দরবানের নতুন সশস্ত্রগোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। কেএনএফ অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তাকে নিঃশর্ত মুক্তি, লুট করা টাকা ও অস্ত্র ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এর আগে গত বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।
জেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র কা নজয ত ঙ্গ্যা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। ক্যশৈহ্লা মারমা লিখিত বক্তব্যে জনসাধারণের নিরাপত্তা জোরদার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা ও অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তার সুস্থ অবস্থায় নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণসহ কেএনএফের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বক্তব্যে বলা হয়, কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের এযাবৎ কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেছে। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পর তারা রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। একই ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট, নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না। নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে। জঙ্গিদের সঙ্গে কেএনএফের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্মারক অনুযায়ী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিনিময়ে কেএনএফকে মাসিক তিন লাখ টাকা দেওয়া হতো বলে র্যাবের বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযানে তিন দফায় থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি থেকে ৩৮ জঙ্গি ও বিভিন্ন সময়ে বহু কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। কেএনফের হামলায় এই পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন সেনাসদস্য। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রুমা সোনালী ব্যাংকে ও বুধবার থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা আক্রমণে ১৭ লাখ টাকা, দুটি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি রুমা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা।