ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৩৫ থেকে ২৫০ কেজিতে। কিছু কিছু জায়গায় এর থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখের পর গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) ক্রেতাশূন্য বাজারেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৩০-২৩৫ টাকায়। আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তা আরও কিছুটা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লারের দাম কমলেও বেড়েছে কক মুরগির দাম। আর উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। কেবল মাংসের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে তাই নয়। রমজান শেষ হওয়ার পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। সাধারণ মানুষের ঘাড়ে আবারও ভর করছে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি চাপ। গতকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি।
ঈদের আগে থেকেই চড়ছিল মাংসের বাজার। ঈদ শেষেও তা ওঠানামায় আছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও সেটাকে আসলে দাম কমা বলা চলে না। আজ বাজারে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, কক মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২৫-৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। গত সোমবারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগির দাম কমেছে যথাক্রমে ১৫-২০ ও ১০-১৫ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর গরু ও খাসির মাংস উচ্চমূল্যেই অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে মুরগির বিক্রেতা মাসুদ বলেন, দাম বাড়ানো-কমানো আমাদের হাতে নেই। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। আরেক বিক্রেতা ইকবাল বলেন, অনেক আগে এক সময় গরু আর মুরগির মাংসের দাম এক ছিল। এখন গরুর মাংস ৮০০ টাকা, তাহলে মুরগির মাংস তো ২০০ টাকার উপরেই হবে।
ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেছিলেন রিজু। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম যদি ২০০ টাকার ওপরে হয় তাহলে আমরা খাবো কীভাবে? আরেক ক্রেতা মনসুর আহমেদ বলেন, ঈদতো চলেই গিয়েছে, কিন্তু এখনও মাংসের দাম কমছে না। যারা গরিব মানুষ তাদের মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
রমজান শেষ হওয়ার পর থেকেই বাড়ছিল সবজির দাম, এখন গরম বাড়ায় এই দামবৃদ্ধির পালে যেন আরও হাওয়া লেগেছে। মাংসের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সবজির দামও। রোজার সময় দাম কমলেও ঈদের পরে সবজির বাজার রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। আজ বাজারে টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৬০ টাকা, দেশি গাজর ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, সজনে ১০০-১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছু সবজির দাম কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা ও গরম বাড়ার কারণে সবজির দামও বাড়ছে। সবজি বিক্রেতা খলিল বলেন, অনেকদিন মানুষ কম দামে সবজি পেয়েছে, এখন কিছুটা বাড়বে। আর গরমের কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়, এটাও দাম বাড়ার একটা কারণ। বৃষ্টি হলে সবজির দাম আরও বাড়বে জানিয়ে আরেক বিক্রেতা জাফর বলেন, এখন তো দাম বেশিই আছে কিছুটা। বৃষ্টি হলে সবজির আরও দাম বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম ব্যবসায়ীরা বাড়াবে এটাই হচ্ছে আসল কথা। এখন রোদ বৃষ্টি হচ্ছে একটা উছিলা।
এদিকে আজ বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু পেঁয়াজ বিক্রেতা শরীফ বলেন, আলু পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর মানুষের কেনা আরও বেড়ে গিয়েছে। আজ তো মনে হয় আমি চাঁদ রাতের মতো বিক্রি করলাম। দেশি রসুনের দাম কমেছে কিনা জানতে চাইলে শরীফ বলেন, দাম কমে নাই। আজকের রসুনের সাইজ ছোট বলে দাম কিছুটা কম। আসলে দাম কমে নাই। এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০- ২০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০- ৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ -১২০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০- ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ৪ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রতি লিটারে ২ টাকা। আর ছোট মুগডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা করে। প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৯০ টাকা, খেশারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫, টাকা, দুই কেজির প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।