মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সে হিসেবে সফলতা বা ব্যর্থতা মানবজীবনের বাস্তবতা। ব্যক্তিজীবনে কেউ সফল হয় আবার কেউ ব্যর্থ হয়। সফলতার জন্য অনেক পালনীয় বিষয় রয়েছে, যেগুলো পালন করতে পারলে মানুষের জীবনে সফলতা অনেকটাই নিশ্চিত। পবিত্র কোরআনের আলোকে যারা নিশ্চিত সফলতা লাভ করে তাদের সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাসী ও মান্যকারী: আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের ওপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩-৫)
যারা মহান রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতপ্রাপ্ত: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আখিরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৪-৫)
কল্যাণের পথে আহ্বানকারী: মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
বেশি পরিমাণ ভালো কাজ করা: যার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে সে সফলকাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ০৮)।
যারা রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য ও একনিষ্ঠ অনুসরণ করে: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যেসব লোক তাঁর ওপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নুরের অনুসরণ করেছে যা তার সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধু তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু রাসুল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা।
তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।’ (সুরা : তাওবাহ, আয়াত : ৮৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা: মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৩৮)
আল্লাহর দলে নিজেদের শামিল করা: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদের শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদের জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ২২)
সব কার্পণ্য থেকে মুক্ত থাকা: মহান আল্লাহ বলেন, যাদের মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সুরা : হাশর, আয়াত : ০৯)।
নিষিদ্ধ কর্মকা- থেকে মুক্ত থাকা: যারা সব ধরনের নেশাকর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের সব কার্যকলাপ থেকে মুক্ত থাকে তারা সফলকাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
সব ধরনের পাপ থেকে তাওবা করা: যেসব মুমিন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত গুনাহের পর তাওবা করে তারা সফলকাম। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)। লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা