কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক ভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোন মুক্ত টমেটো চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হকের তত্বাবধানে গঠিত দল। হাবিপ্রবির গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিস্কোর দ্যা ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস (টিডব্লিউএএস) ও দ্যা সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) যৌথ অর্থায়নে গবেষক ড. আজিজুল হক ও তার দল কোনো রকম রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোন ব্যবহার ছাড়া খুবই স্বল্প মাত্রায় ইউরিয়া, ফসফরাস ও ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে টমেটো চাষে ব্যাপক সাফলতা পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি টমেটো, আলু, বেগুন, মরিচসহ ধান, ভুট্টার মতো ফসলেও ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কৃষক পর্যায়ে ফলন পরীক্ষণ মাঠ পরিদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আইআরটি) এর পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম হারুন-উর-রশিদ এবং ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক ড. আনোয়ারা আক্তার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সয়েল সাইন্স বিভাগের লেকচারার মো. রায়হানুল হক, প্যাথলজি এন্ড প্যারসাইটোলজি বিভাগের লেকচারার ডা. মো. গাউসুর রহমানসহ কৃষক ও গবেষণা কার্যক্রমে কর্মরত শিক্ষার্থীরা।রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোন ছাড়া স্বল্প মাত্রায় ইউরিয়া, ফসফরাস ব্যবহারে টমেটোর উচ্চ ফলন দেখে অভিভূত হয়েছেন পরিদর্শকরা। এসময় সফলতা পাওয়া টমেটো ফসলের জমির কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন তারা।
কীটনাশক ও হরমোনের পরিবর্তে ব্যাকটেরিয়া স্প্রের মাধ্যমে টমেটো চাষ করা দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দর উপজেলার কৃষক মো. নুরুল ইসলাম শাহ জানান, খুবই সুন্দর টমেটোর চাষ হয়েছে। তার পাশের জমির কৃষকরা তাদের জমিতে সপ্তাহে একাধিকবার কীটনাশক দেওয়ার পরও জমিতে পোকা দেখা যায়, এসব পোকা গাছ নষ্ট করেছে। সেই তুলনায় ব্যাকটেরিয়া ব্যাবহার করে তার ফলন অনেক ভাল হয়েছে। শীতকালীন ফসল হলেও গ্রীষ্মকালীন সময়ে টমেটোর জাতটি চাষ হচ্ছে। এই টমেটো জমিতে আরো দু’মাস স্থায়ী হবে। ওই কৃষক বলেন, এই ব্যাকটেরিয়া টমেটোর পাশাপাশি আমি আমার পার্শ্ববর্তী মরিচ ক্ষেতেও ব্যাবহার করেছি। অনেক ভাল ফলন পাচ্ছি। এর আগেও আমি মরিচ চাষ করেছি, কিন্তু এত ভাল ফলন কখনোই পাইনি। এবার এই ফসল চাষে অনেক সফলতা অর্জন করেছি।
দিনাজপুর সদর উপজেলায় একই প্রক্রিয়ায় টমেটো চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন আরেক কৃষক আবসার আলী। আগামীতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটো চাষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।
ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আইআরটি) এর পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম হারুন-উর-রশিদ বলেন, ড. আজিজুল হক দীর্ঘদিন ধরে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে টমেটো চাষের উপর সফলতার সাথে গবেষণা পরিচালনা করছেন। তার এই গবেষণা দেশের কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এতে কৃষক যেমন উচ্চ ফলন পাবে, তেমনি ভোক্তারা বিষমুক্ত ফসল পাবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে।
কৃষকের টমেটো মাঠ পরিদর্শন করে ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক ড. আনোয়ারা আক্তার বলেন, রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত টমেটো যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে উৎপাদিত এসব টমেটো সহজেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। টমেটো গুলো থেকে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন ফুড প্রোডাক্টে প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে। আমি এই গবেষণার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।