ক্ষণস্থায়ী জীবনের নাম দুনিয়া। ষাট, সত্তর বা একশ’ বছরের জিন্দেগিতে প্রতিটা মানুষের স্বপ্ন জীবনে উন্নতি করার। তাই নিজেকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতদিন একাকার করে মেহনত ও সাধনা করে। আকাক্সক্ষা সফল হওয়ার। তার সাধনার কাছে আল্লাহর বিধান পালন করা তখন তুচ্ছ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। নামাজ, রোজাসহ ধর্মীয় কোনো অনুশাসন মানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। দুনিয়া অর্জনের জন্য আখিরাতের জীবনকে বরবাদ করা হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর কতক বান্দা রয়েছে যাদের লক্ষ্য হলো, আখিরাতের জীবনে সফল হওয়া। দুনিয়া নিয়ে তাদের নেই বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা। কোনোরকম দিন গুজরান করতে পারলেই হলো। তাদের মাথায় সর্বদা কাজ করে, দুনিয়া আখিরাতের ক্ষেতস্বরূপ। এখানে যেমন কর্ম আখিরাতে তেমন ফল। যত বিপদই আসুক না কেন, আল্লাহর হুকুম যেন না ছুটে যায় সে জন্য তারা সর্বদা সচেষ্ট থাকে। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, অনন্তকালের জিন্দেগিতে সফল হতে বস্তুত যে আখিরাত কামনা করে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টার নেয়ামতের প্রাচুর্য দান করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দিই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না (সূরা শুরা : ২০)।
একজন ঈমানদারের উচিত আখিরাতমুখী হওয়া। কারণ, আখিরাতের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। যে আখিরাতমুখী হবে, সে দুনিয়া এবং আখিরাত সবই পাবে। পক্ষান্তরে যে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেবে, দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকবে সে দুনিয়াও হারাবে আখিরাতও। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: এমন উল্লেখ করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংহত করে দেবেন। তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে।
আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চেয়ে বেশি পাবে না (তিরমিজি : ২৪৬৫)।
আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা দুনিয়া পদদলিত করে আর দুনিয়া তাদের পদচুম্বন করে। তাই বলে সব কিছু বাদ দিয়ে দুনিয়া অর্জন করা আবার সব কিছু বাদ দিয়ে আখিরাত অর্জন করা নয়; বরং ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। দুনিয়াবী কাজ এতটুকু করতে হবে যার দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়। বাকিটা সময় আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে হবে। নতুবা দুঃখ-দুর্দশার গ্লানি চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব দূর করে দেবো। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব-অনটন দূর করব না(তিরমিজি : ২৪৬৬)। মানুষের জীবনে ব্যস্ততা থাকবে। তবে সে ব্যস্ততা যেন কেবল দুনিয়াকেন্দ্রিক না হয়। সব ব্যস্ততা-ঝামেলা কাটিয়ে স্থায়ী জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য কাজ করতে হবে। আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। আল্লাহর জন্য যে সময়টুকু ব্যয় হয় সেটাই মূলত সময়, সেটাই মূলত উন্নতি।
লেখক : শিক্ষার্থী, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ,আল-মাদানী ঢাকা