শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

নওগাঁয় তিতির পাখি পালনে সুমনের ব্যাপক সাফল্য

মোশারফ হোসেন জুয়েল নওগাঁ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

বাণিজ্যিকভাবে তিতির পাখি পালন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন নওগাঁর মান্দার কিত্তলী গ্রামের অনিল কর্মকারের ছেলে সুমন কর্মকার। তিতির পালন করে ঘুরেছে তার ভাগ্যের চাকা। মৃত্যুঝুঁকি কম হওয়ায় তিতির পালনে আমিষের অভাব পূরনের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হবে। তিতির শোভাবর্ধনকারী পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিতিরের খাদ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি। তিতিরের মাংস ও ডিম সুস্বাদু এবং খুব শান্ত। গ্রামীণ পরিবেশেই হাঁস-মুরগির সাথেও লালন-পালন করা যায়। বাংলাদেশে আছে সাধারণ তিতির ও কালো তিতির। ডিমের রঙ ঘন বাদামি, ছোট ছোট দাগ থাকে, লাটিম আকৃতির ও ছোট। পুরুষ তিতির মাথার মুকুট স্ত্রীর চেয়ে বড়। পায়ের রঙ কালচে।
এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবেচয়ে বেশি। প্রাকৃতিক খাদ্য খায় বলে খরচ কম। উন্নতমানের ঘর দরকার হয় না। ৬-৭ মাস বয়সে ডিম পাড়ে। বছরে ১০০-১২০টি ডিম দেয়। ৫-৬ মাসে খাওয়া ও বিক্রির উপযোগী হয়। ডিম ফুটাতে কৃত্রিমভাবে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৭-২৮ দিন সময় লাগে। আর প্রজননের মৌসুম মার্চ-অক্টোবর। বিদেশি গিনি ফাউল ও চিনা মুরগি নামে পরিচিত তিতির শোভাবর্ধনকারী পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুস্বাদু মাংস ও ডিমের জন্য শত শত বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে তিতির পাখি একটি শৌখিন পাখি। তবে বাণিজ্যিকভাবে তিতির খামার এ দেশে তেমন একটা গড়ে ওঠেনি। তিতির পাখির আদি বাসস্থান আফ্রিকা মহাদেশে। আমাদের দেশে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমানে তিতির পাখি দেখা যায়। এরা বন্য প্রকৃতির। সাধারণত এদের পার্ল প্রজাতি, সাদা প্রজাতি ও ল্যাভেন্ডার এই তিন প্রজাতি হয়ে থাকে। তবে পার্ল প্রজাতি সবচেয়ে জনপ্রিয়। অল্পবয়স্ক তিতিরের মাংস নরম এবং অন্যান্য বন্য পাখি যেমন ঘুঘু, ডাহুক ইত্যাদি অপেক্ষা এদের মাংসে সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ডিম পাড়ে। প্রতিটি ডিমের ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। দানাদার শস্য, কচি ঘাস, ভুসি, কুঁড়া, পোকা-মাকড়, সবজি এদের প্রধান খাদ্য। তিতিরের তেমন কোনো রোগবালাই নেই। শুধু বাচ্চা ফোটার প্রথম দুই সপ্তাহ ভালোভাবে পরিচর্যা করলে পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে। মুরগির চেয়ে এদের রোগবালাই কম হয়, ডিম বেশি পাড়ে, ওজন বেশি হয়, উৎপাদন খরচ কম ও দেখতে সুন্দর। এ জন্য তিতির পালন লাভজনক। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এ পাখি পালনের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সফল উদ্যোক্তা সুমন কর্মকার বলেন, ২০২২ সালে টিভিতে প্রথম দেখে মাত্র ৫টি তিতিরের বাচ্চা দিয়ে তিনি খামার শুরু করেন। তিতিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রাকৃতিক খাদ্য খায় বলে খাদ্য খরচ কম। উন্নতমানের ঘর দরকার হয় না। খুব বেশি জিনিসপত্র লাগে না। ডিম ভাঙার সম্ভাবনা কম থাকে। তিতির পালনে খরচ ও ঝুঁকি অনেক কম। এখন তার খামারে ৫০০ তিতির পাখি রয়েছে। এরা পরিবেশের সাথে অনেক সংবেদনশীল। তাই বাড়িতে তিতির পালন করা খুব সহজ। এদের খাবারের পছন্দের তালিকায়, কচি ঘাস, ঘাসের বিচি, পোকা মাকড়, কখনো মাটি, ধান, গম, ভুট্টা ভাংগা, ধানের কুড়া, ভাত ইত্যাদি। ঘর আলো বাতাস পূর্ণ স্থানে করতে হয়। ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে হয়। স্যাঁতস্যেতে যাতে না হয়। তিতিরের পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও যদি তিতিরের পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক বড় বড় হোটেল ও রেস্তোরায় এই তিতিরের মাংসের বেশ কদর আছে। সব কিছু বাদ দিয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হয় তার। আর বেকার ভাইদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, বেকার হয়ে না ঘুরে স্বল্প খরচে তিতির পাখি লালন পালন করলে বেকার থাকতে হবে না। আর তিনি বিনা পয়সায় বেকার ভাইদের সহযোগিতা করবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com