সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

সীতাকুন্ডে পথে-প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কদমফুল

খাইরুল ইসলাম (সীতাকুন্ড) চট্টগ্রাম
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

কদমফুল মনে করে দিচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস নিয়ে প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। সীতাকুন্ডের গ্রাম-গঞ্জে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা কদমফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুলপ্রেমীদের। আবার গ্রামীণ শিশুদের খেলার প্রধান উপকরণ হিসেবে এ ফুলের নেই কোন জুড়ি। এছাড়া মধু সংগ্রহে ফুলে ব্যস্থতা বেড়েছে মৌমাছি‘সহ অসনিত পতঙ্গের। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ধুয়ে মুছে অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অবহেলিত সাদা-হলুদ রঙের কদমফুল। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি ভেজা গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদা-হলুদ রঙের নান্দনিক এ ফুল। তরুণ-তরুণীরা কদমের এ নান্দনিক ফুল তাদের প্রিয়জনকেও উপহার দেয়। খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও। আর কন্যা শিশুরা মনের আনন্দে খোঁপায় বাঁধে কদমফুল। আবার কতেক শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলাকার অংশটি ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলায় মেতে উঠে। আদিকাল থেকে বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাওয়া নান্দনিক কদমফুল আজ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। বৃত্তপুস্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর‘সহ কদমের রয়েছে আরো অগনিত নাম। ছোট্ট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার, যাতে হলুদ রঙের পাঁপড়িগুলো আটকে থাকে। পাঁপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসতে থাকে প্রকৃতির মাঝে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে নান্দনিক হলেও এর আর্থিক মূল্য খুবই স্বল্প। কদম কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরিতে অনুপযোগী। তবে কাঠ দিয়ে বাক্সপেটরা, দিয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। শুধু সৌন্দর্যে আর মাধুর্যে নয়, ভেষজগুণের পাশাপাশি কদমে রয়েছে আরো কতেক গুরুত্ব। কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক হলেও গ্রাম বাংলায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই অতীত। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টিতে হালকা দক্ষিণা বাতাসে হলুদ-সাদা ফুলে দোল খাওয়া কদমের নেই আগের মতো সেই জৌলুস। দূর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে হলুদ-সাদা ফুলের ঝর্ণা। প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধণ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ বৃক্ষের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। উপজেলার ঢালীপাড়ার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ নাসিমুল হুদা নওশাদ বলেন, এক সময় ঢালীপাড়া, মুরাদপুর, বাড়বকু-, বাঁশবাড়িয়া, মহাদেবপুর, আমিরাবাদ, ইকোপার্ক এবং সীতাকুন্ড পাহাড়‘সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বাড়ীর সামনে, রাস্তার পাশে, পুকুর ও খালের পাড় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক বড় বড় কদমগাছের বনায়ন দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি। সীতাকু- ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ফেরদৌস খান বলেন, বর্তমানে বৃক্ষ রোপনের তালিকায় নেই কদমগাছ, তবে নিয়মিত কর্তন হচ্ছে। এ গাছ রোপনে এখন পর্যন্ত নেই কোন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগও। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, কদম ফুল শুভ্রতার প্রতীক। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কদমফুল বর্ষার বৃষ্টিস্নাতক দিনে বাঙালীদের মনে অন্য রকম অনূভূতি এনে দেয়। বাল্য বয়স থেকেই গ্রামীণ পরিবেশে কদমফুলের সাথে পরিচিত হয়ে আসছি। বর্তমানে শিমুল‘সহ অন্যান্য ফুল বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হলেও কদমের বেলায় দেখা যাচ্ছে না তেমন‘টা। আষাঢ়-শ্রাবণে এক সময় পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে কদমফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্ত হওয়া কদমগাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com