সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন

জীবন্ত রাসেল ভাইপার নিয়ে হাজির ব্যক্তি, কিন্তু কথা রাখলেন না আ’লীগ নেতা

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেল ভাইপারের জন্যই পুরস্কার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। প্রথমে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ মারত পারলে এবং পরে জীবিত ধরতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা পর বিষয়টি নিয়ে হুলস্থুল শুরু হয়। মুরাদ মোল্লা নামে একজন মৃত একটি রাসেল ভাইপার এবং পরে রেজাউল নামে ব্যক্তি জীবত সাপ নিয়ে হাজির হন।
তে গতকাল রোববার (২৩ জুন) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট লেখেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হক। সেখানে তিনি পুরস্কারের ঘোষণাটি প্রত্যাহারের কথা জানান। এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভার বিবিধ আলোচনায় শামীম হক ফরিদপুরে রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘শুধুমাত্র কোতোয়ালি থানার মধ্যে কেউ এই সাপ মারতে পারলে তাকে এই টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। আমাদের সভাপতি সাহেব এই টাকা দেবেন।’
এ ঘোষণার পরে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠি দিয়ে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে এক কৃষক। পরে তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে যান। আবু ফকির তখন সাংবাদিকদের জানান, ‘মুরাদ মোল্লাকে সভাপতি ঘোষিত পুরস্কার দেয়া হবে।’
তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের এই পুরস্কারের ঘোষণার পরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এটি আইনসিদ্ধ নয় বলে সমালোচনা করা হয়। এরপর অবশ্য রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেললে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা থেকে সরে আসে জেলা আওয়ামী লীগ। বলা হয়, মেরে ফেললে নয়, জীবিত অবস্থায় রাসেল ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেল ভাইপার সাপ জীবিত অবস্থায় ধরতে পারেন, তবে তাকে ৫০ হাজার টাকায় পুরস্কার দেয়া হবে। এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
পরদিন শনিবার সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেল ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক যুবক। শনিবার সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার রেজাউল।
রেজাউল বলেন, ‘সকালে চরের মধ্যে থেকে ধরছি। সাপটা হাইট্যা (হেঁটে) যাইতেছিল। গায়ের গেঞ্জি ছুড়ে ওকে ধরছি। নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করছেন। এ জন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বনবিভাগে জমা দিতে আইছি।’
তবে গতকাল রাববার দুপুরে ফরিদপুরের বনবিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপসহ ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাই অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাব কেন? ওই কৃষকের উচিত হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে ওই স্থানে ছেড়ে দেয়া।’ গতকাল রোববার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে সকলকে রাসেল ভাইপার সাপ মারা বা ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। শামীম হক তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেল ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। বর্তমানে রাসেল ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায় যেকোনো পুরস্কার বা কৌতূহলবশত এ সাপ অনিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। তিনি লিখেন, সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com