সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

সারা দেশে কাপাসিয়ার প্রসিদ্ধ কাঁঠাল

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

বাংলাদেশর জাতীয় ফল কাঁঠাল। গ্রীষ্মকালীন এই ফল বড় আকৃতির রসালো কোষ ও চমৎকার স্বাদ-গন্ধের ফলটি অনেক জনপ্রিয়। দেশের সব জায়গায় কাঁঠাল জন্মে। ঢাকার উত্তরের উঁচু অঞ্চল গাজীপুরের কাপাসিয়ার সবচেযয়ে বেশি কাঁঠাল জন্মে। ঢাকার আশেপাশের এলাকা জুড়ে কাপাসিয়ার কাঁঠাল সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। এই মৌসুমে ট্রাক বোঝাই করে কাপাসিয়ার কাঁঠাল সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলা গুলোতে। কাঁঠালে পুষ্টি উপাদান আনেক রয?েছে। যা অন্য কোন ফলে নেই। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি ও পাকা কাঁঠাল ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এই ফলের কোনো অংশই ফেলনা নয়, কাঁঠালের বিচি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়, কাঁঠালের ছাল গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির জন্য অন্যতম একটি খাবার। কাপাসিয়া উপজেলার কাঁঠাল প্রসিদ্ধ ঐতিহ্যপূর্ণ। কাপাসিয়ার কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হচ্ছে। এক সময় উপজেলা জুড়ে ছিল এই কাঁঠালের হাট। চাঁদপুর ইউনিয়নের ঘাঠকুরি বাজার, কড়িহাতা ইউনিয়নের কবিরের বাজার, ইকুরিয়ার বাজার ও বেগুনি বাজার বয় কাঁঠালের বাজার ছিল প্রসিদ্ধ। তখন নদীপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হতো কাঁঠাল। এখন সড়ক যোগাযোগ উন্নত হাওয়ায় স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী কাপাসিয়ার কাঁঠাল ছাড়িয়েছে। জেলা শহর ছাড়িয়ে এখন বিভাগীয় শহর গুলোতে সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে কাপাসিয়ার কাঁঠালের সুখ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে। এবছর কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭ শত ৬০ হেক্টর। যা গত বছরের চাইতে ৬০ হেক্টর বেশি। প্রতিবছর কাঁঠালের মৌসুম শুরুর হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কাপাসিয়ার কাঁঠাল কিনতে আসে। সারাদিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে তাঁরা কাঁঠাল কিনে ট্রাক ও নদী পথে নিয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কাঁঠাল বেচাকেনা। এ অঞ্চলের কাঁঠাল খুবই সুস্বাদু হওয়ায় দেশের প্রায় সব জায়গায় রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এখন ক্রেতা-বিক্রেতার হাক ডাকে মূখরিত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ ও রাওনাট বাজার, চাঁদপুর ইউনিয়নের ঘাঠকুড়ি ও চাঁদপুর বাজার, কাপাসিয়া ইউনিয়নের সদরের কাপাসিয়া বাজার, রায়েদ বাজার, আমরাইদ বাজার,বারিষাব ইউনিয়নের গিয়াসপুর বাজার,চৌকারচালা বাজার ও ডাওরা বাগের বাজার,টোক ইউনিয়নের টোক ও বীর উজুলী বাজার, সন্মানিয়া ইউনিয়নের আড়াল বাজার, ঘাগটিয়া ইউনিয়নের ঘাগটিয়া ও চালার বাজার করি হাতা ইউনিয়নের বেগুনি বাজার গুলো থেকে পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁঠাল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য ট্রাক-পিকআপ ও নদীপথে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিটি বাজারেই এখন কাঁঠাল সমারোহ প্রচুর রয়েছে। পাইকারা তাদের চাহিদা মত কাঁঠাল কিনছেন এবং এ বছর কাঁঠাল আকার আকৃতি ও দাম অনেক ভালো। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশেই কাপাসিয়া বাজার খেয়াঘাট মোড়ে কাঁঠাল কিনে টুক করে রেখেছে পাইকার। বাজারে চারদিকে রসালো কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধ। আর ছড়িয়ে আছে কাঁঠাল ভর্তির ভেন ঠেলা গাড়ি, ছোট-বড় পিকআপ। এই কাঁঠাল কে কেন্দ্র করে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। এবারে কাঁঠালের ফলন গতবছরের তুলনায় ভালো কাঁঠাল দেখতে এবং আকৃতিতেও অনেক বড় হয়েছে তাই দাম বেশ ভালো। এতে খুশি কাঁঠাল চাষিরা। এক ভ্যান গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিড়ে বাজারে এসেছেন কাঁঠাল চাষী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের কাঁঠাল দেখতে এবং আকারে অনেক বড় হয়েছে। কাঁঠাল রং অনেক সুন্দর যে কারণে এ বছর কাঁঠালের চাহিদা ভালো। গত বছরের তুলনায় এবার ভালো কাঁঠাল ধরেছে। এবার কাঁঠালের দাম ভালো পেয়েছি। কাপাসিয়া বাজার থেকে কাঠাল কিনে সিলেটে নিয়ে বিক্রি করেন মোঃ শহীদ মিয়া। প্রতিবছরই কাপাসিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে তিনি কাঁঠাল কিনেন। তিনি জানান, এবছর কাঁঠাল দেখতে অনেক ভালো, আকারে অনেক বড়, কাঁঠালের রংও চমৎকার হয়েছে। বরাবরই কাপাসিয়ার কাঁঠালের অনেক চাহিদা তাই প্রতিবছরই কাপাসিয়া থেকে কাঁঠাল কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। আজ যে কাঁঠাল গুলি কিনেছি তার সিলেটে নিয়ে বিক্রি করব। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা করে কাঁঠাল কিনেছি। তবে আক্ষেপ করে বলেন, কাপাসিয়া বাজারে ইজারাদার কে প্রতি পিস কাঁঠাল জন্য খাজনা দিতে হয? ৪ টাকা করে ১৫’শ কাঁঠাল কিনেছেন সিলেট নিয়ে বিক্রি করার জন্য। কাপাসিয়া বাজার ছাড়া অন্যান্য বাজার থেকে কাঠাল কিনলে কাঁঠাল প্রতি দুই থেকে তিন টাকা খাজনা দিতে হয় কাপাসিয়া বাজারে অন্যান্য বাজারে তুলনায় বেশি। কাপাসিয়া থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বিক্রি করেন পাইকার মোঃ কাজিম উদ্দিন আকন্দ ৪০ বছর ধরে কাঁঠালের ব্যবসা করেন তিনি। তিনি জানান, ৫৫ থেকে ৯৫ টাকা করে কাঁঠাল কিনেছেন কৃষক ও ছোট পাইকারদের কাছ থেকে। ৫ টাকা করে বাজারের ইজারা খাজনা ও তিন টাকা করে ট্রাকে বোঝাই করে দেয়ার জন্য দিতে হয়। ট্রাক ভাড়া খরচে বেড়েছে। কাপাসিয়ার কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় খরচ বেশি জেনেও কাপাসিয়া থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে বিক্রি করি। পাইকার মোঃ হিরণ মিয়া ২০ থেকে ৮০ টাকা কে কিনেছি ২ হাজার কাঁঠাল কিনেছেন কাপাসিয়া বাজার থেকে। প্রতি কাঁঠালের জন্য খাজনা দিয়েছেন ৫ টাকা করে। এই বাজারে খাননার পরিমাণটা একটু বেশি আরেকটু কম হলে আমাদের লাভ একটু বেশি হত। বারিষাব,রায়েদ, সিংহশ্রী ও টোক এলাকা থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, প্রতিবছর প্রচুর কাঁঠাল কিনে নিয়ে আমি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। এ বছর কাঁঠালের দেখতে অনেক ভালো পোকা ও নষ্ট কাঁঠালে কম যে কারণে কাঁঠাল বিক্রিতে হচ্ছে ভালো। কাপাসিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানান, কাপাসিয়ার কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু। কাপাসিয়ার বাইরে এলাকায় কাপাসিয়ার কাঁঠালের অনেক চাহিদা রয়েছে। এই ফলের সবচাইতে সমস্যা হচ্ছে বাজারজাতকরণ। কাঁঠাল যখন পাকে তখন একসাথে পাকে শুরু করে। তবে কাঁঠাল প্রক্রিয়া করে রাখার ব্যবস্থা চালু হলে চাষী ও ব্যবসায়ীরা লাভবান বেশি হতো। পরবর্তী সময় যেন কাঁঠাল বিক্রি ও ব্যবহার করা যায়। এবছর কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭ শত ৬০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com