ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ-আঠারবাড়ি ১৫ কিলোমিটার জেলা মহা সড়কের ১২ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করলেও তিন কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করতে না পারায় চলাচলকারী লোকজনের প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার সড়কে চলাচলের অনুপযোগী রয়েছে এবং বাকী দেড় কিলোমিটারের আংশিক কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাকি অংশটুকু দ্রুত কাজ শেষ করে ভোগান্তি দূর করার দাবি জানান চলাচলকারীরা। ভূমি অধিগ্রহণ করার পর সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরুর বিধান থাকলেও কোন প্রকার অধিগ্রহণ না করেই ১৫ কিলোমিটার সড়কের ১২ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাকি ৩ কিলোমিটার সড়ক অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া নিজের ভিটে ও জমি ছাড়তে নারাজ মালিকপক্ষ। এসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদাস কাজ করতে চাইলেও তা বাঁধা দেন মালিকপক্ষ। সেই বাঁধার পর মূল সড়কের প্রসস্তের চেয়ে আরো কমিয়ে দেড় কিলোমিটার সড়কের কাজ করা হয়েছে। এদিকে বাকী রয়েছে আরো দেড় কিলোমিটার সড়কের কাজ। বর্তমানে ওই দেড় কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা হওয়ায় চলাচলকারী লোকজনের প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বরাদ্দে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আঠারবাড়ি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। কাজটি ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা ছিলো। কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় পুনরায় সময় বাড়িয়ে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার ১২ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করা হয়। তবে পুরো সড়কের অধিগ্রহণ না করে আঠারবাড়ি থেকে সৈয়দ ভাকুরী এলাকা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করতে পারলেও ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় ৩ কিলোমিটার অংশ অধিগ্রহণ না করে কাজ করতে দিবেনা বলে আটকে দেয় জমির মালিকগন। যে কারনে বাকি ৩ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে সেই ৩ কিলোমিটার মধ্যে থেকে দেড় কিলোমিটার সড়কে প্রসস্ত কমিয়ে কাজ করা হয়েছে। এদিকে বাকী আরো দেড় কিলোমিটারের কাজ বন্ধ থাকায় সড়কের অবস্থা হয় বেহাল। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার চলাচলকারী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই সড়ক দিয়ে যেতে হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সড়কটি খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ভোগান্তি দূর করার দাবি জানান তারা। সড়কটি কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত হচ্ছে। সিএনজি চালক আবু তাহের বলেন, আমাদের এই উপজেলা ছাড়াও পার্শবতী নেত্রকোনা জেলা এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কিছু অংশের মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় তিন কিলোমিটার সড়কের যে বেহাল দশা এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই খুব দ্রুত সময়ে সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ শেষ করে ভোগান্তি দুর করার দাবি জানাচ্ছি। পৌর এলাকার কাকনহাটি গ্রামের জমির মালিক আসাদুল্লাহ বলেন, আমাদের পৌর সভার ভিতরে অনেকের বাসা এবং দোকানপাট ভাঙতে হবে তাই অধিগ্রহণ ছাড়া কাজ করা এটা মোটেও সম্ভব না। কারণ অধিগ্রহণ না দিয়ে কাজ শেষ করে কতৃপক্ষ চলে গেলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরে আমরা যারা বাসাবাড়ি ভেঙে চলে যেতে হবে তাদের তখন করনীয় কি হবে। যে কারনে আমাদের অধিগ্রহণ না পাওয়া পর্যন্ত কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সাথে আরেকটি বিষয় রয়েছে সড়কে ৯০ ফিট রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের পৌর সভার ভিতরে কিছু অংশ ৬০ ফিট করা হয়েছে আর কিছু অংশ ৯০ ফিট করা হয়েছে। সুতরাং এই বৈষম্য দুর করতে হবে। তাই আমাদের দাবি অধিগ্রহণ করা এবং ৯০ ফিট না করে ৬০ ফিট করা হউক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঈশ্বরগঞ্জ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মনে হয় আবারো জুন মাসে কাজের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই আবার সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে পৌর এলাকায় আসার পর অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে দেড় কিলোমিটার সড়কের অবস্থা ভালো নেই। তাই মানুষের ভোগান্তি দূর করার জন্য সড়কটি সাময়িক সংস্কার করা হচ্ছে। আর অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে উর্ধত্বন কতৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশাকরি দ্রুত সময়ে সমস্যার সমাধান শেষ করে কাজ শুরু করা হবে। ময়মনসিংহ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মুনমুন নাহার বলেন, অধিগ্রহণ কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ে এই জটিলতা দূর করে সড়কের কাজ শেষ করা হবে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, এই সড়কের বিষয়ে আমি অবগত নই। এবিষয়ে কিছু বলতে গেলে ইঞ্জিয়ারের সাথে আলোচনা করে বিস্তারিত বলতে হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সকড় কতৃপক্ষের সাথে খুবই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছি। এখন জেলা প্রশাসনের এল এ শাখায় জমির মালিকপক্ষের যে পাওনা আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে দিয়ে শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। আশাকরি এখন জেলা প্রশাসন বিষয়টি খুব দ্রুত সময়ে শেষ করবেন। বর্তমানে সড়কটির বেহাল দশা দূর করতে এবং জনসাধারণের ভোগান্তি দুর করতে আপাতত সংস্কার করার জন্য বলা হয়েছে।