ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১০ ঘণ্টার সফল অপারেশনের পর পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো শিফা ও রিফাকে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢামেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা.শাহানূর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, প্রায় দেড় বছর বয়সী শিফা ও রিফার অস্ত্রপচার হলেও ভালো নেই রিফা। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় রিফাকে পিআইসিইউতে রাখা হয়েছে ও শিফা মায়ের কোলে ভালই আছে।
বরগুনা জেলার বেতাগী থানার মাহমুদা ২০২৩ সালের ৭ জুন বুক-পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় জমজ কন্যা শিশুর জন্ম দেন।পরে চলতি বছরের ২১ জুন তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এরপর ছয় মাস পর অপারেশনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তাদের শরীরে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকলেও বুক ও পেট জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় দুজনের হৃদপি-ের পর্দা, সাধারণ যকৃত নালী, পোর্টাল শিরা, ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ এক অন্যের সঙ্গে জোড়া লাগানো রয়েছে।
টিস্যু বর্ধিতকরণের পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ সেপ্টেম্বর ১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। অপারেশন শেষে দুজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিই) ভেন্টিলেশন দিয়ে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করা হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শিফার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা বর্তমানে উন্নতি হওয়ায় আজকেই কেবিনে দেওয়া হতে পারে।
ডা শাহানূর ইসলাম আরও বলেন, আমাদের এই অপারেশনে ৮০ জনের একটি টিম ছিল। পরিবারটি অনেক গরিব তাই তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। চিকিৎসার খরচ বহন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ,আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারেডেম, ট্র্যান্সফিউশন মেডিসিন ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন।
হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে শিফা ও রিফার বাবা বাদশা বলেন, জোড়া লাগানো মেয়েদের চিকিৎসায় সব ধরনের সেবা আমি ফ্রি পেয়েছি। এক বছর ধরে শাহানুর ম্যাডাম নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছেন এবং আমার মেয়েদের চিকিৎসা করেছেন। যারা চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি।