রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করল হিজবুল্লাহ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সাথে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের সহমর্মিতা এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তার সাথের শহীদদের, যারা তার সাথে এই পবিত্র পথে যাত্রা করেছে বৈরুতে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদীদের হামলায়।’
হিজবুল্লাহ আরো জানিয়েছে, যদিও তাদের প্রধান নেতা নিহত হয়েছেন তা সত্ত্বেও গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় লেবাননের প্রতিরক্ষায় শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের জিহাদ অব্যাহত থাকবে।
এর আগে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করে, শুক্রবার বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তখন বিষয়টি নিয়ে হিজবুল্লাহ কোনো মন্তব্য করেনি।
গতকাল বিকেলে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয় হিজবুল্লাহর সদর দফতরকে। হামলার সময় সেখানে ছিলেন হাসান নাসরুল্লাহ।
আইডিএফ আরো বলেছে, হাসান নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে সে হামলা চালানো হয়েছিল। ওই হামলায় তার সাথে হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারও নিহত হয়েছেন।
আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘এখানে বার্তা খুব পরিষ্কার। ইসরাইলি নাগরিকদের যারা হুমকি দেবে তাদের কিভাবে খুঁজে বের করতে হয় সেটা আমরা জানি। সেটা উত্তরে, দক্ষিণে কিংবা আরো দূরে হলেও আমরা খুঁজে পাবো।’
আইডিএফ বলেছে, দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন তখন সেখানে হামলা চালানো হয়। দক্ষিণ বৈরুতের এ জায়গাটি হিজবুল্লাহর একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
আইডিএফ তাদের ‘এক্স’ প্লাটফর্মে লিখেছে, হাসান নাসরাল্লাহ পৃথিবীতে আর আতঙ্ক ছড়াতে পারবে না।
ইসরাইলি বাহিনী গত বেশ কয়েকদিন যাবত লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইল দাবি করছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে কাবু করতে তাদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে।
হিজবুল্লাহকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ দিয়ে আঘাত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরাইল পুরোদমে হামলা শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
দুটি আলাদা ঘটনায় হাজার হাজার পেজার এবং রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হওয়ায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
হাসান নাসরুল্লাহর (৬৪) জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তার ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।
১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’-এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সাথে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তাতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরাইলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।
নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সাথেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরাইলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরাইলি সেনাদের সাথে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।
নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর।
দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।
সর্বশেষ হিজবুল্লাহ–ইসরাইল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরাইলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি ও অন্যান্য
নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনিকে
লেবাননে যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে হিজবুল্লাহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গাজা যুদ্ধ, লেবাননে নতুন করে যুদ্ধ এবং হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করার খবরে উত্তেজনা চরমে মধ্যপ্রাচ্যে। এরই মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কোনো এক গোপন স্থানে নিরাপদে রাখা হয়েছে তাকে। তেহরান থেকে তথ্য জানানো হয়েছে এমন দু’জন আঞ্চলিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে রিপোর্টে। এর আগে এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইরানের একটি বিমান লেবানন বা সিরিয়ার উদ্দেশে উড়েছিল। কিন্তু তারা জানতে পারে লেবাননের বিমানবন্দর ইসরাইলি সেনারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এটা জানার পরই ইরাকের আকাশসীমা থেকে বিমানটি ইরানে ফিরে গেছে। উল্লেখ্য, এমনিতেই গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তীব্র। তার ওপর লেবাননে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল তাতে যেকোনো সময় যুদ্ধ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অন্যদিকে জাতিসংঘে শুক্রবার বিশ্বনেতারা যখন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন লেবাননের মাটি বোমার আঘাতে জ্বলছে। রাতের লেবানন আলোকিত হয়ে উঠছিল বোমার আঘাতে।
ওদিকে বিবিসি বলছে, নিজের অফিসিয়াল পেজে আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এতে দেয়া বিবৃতিতে তিনি হাসান নাসরাল্লাহর নাম মোটেও উল্লেখ করেননি। তবে ‘লেবাননের প্রতিরোধহীন জনতা’কে হত্যা করার জন্য প্রথমেই তিনি নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, এতে ইসরাইলি নেতাদের অদূরদর্শিতা ও মূর্খতার নীতি প্রমাণিত হয়েছে। ইসরাইলের ক্রিমিনালদের অবশ্যই জানতে হবে যে, লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্তঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করার জন্য তারা খুবই ছোট। হিজবুল্লাহকে আঞ্চলিক সব প্রতিরোধ বাহিনী সমর্থন করে এবং তাদের পাশে আছে। তিনি লেবাননের জনগণ এবং হিজবুল্লাহর পাশে দাঁড়াতে সব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানান। নিষ্পেষণকারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদেরকে সমর্থন দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com