শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অব্যাহত ভারী বর্ষনে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বিপৎসীমা অতিক্রম করলে পানিবন্দী হয়ে পড়বে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার চরা লের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। ডিমলা উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বুদারু মিয়া (৩৫) বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমাদের রাত জেগে থাকতে হবে। কখন যে কী হয় ঠিক নেই।’ ছাতুনামা কেল্লাপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ‘দুপুরে বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে। আর একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’ এ বিষয়ে ৭ নম্বর খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সহিদুজ্জামান সরকার দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বাইশ পুকুর এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। নি¤œা ল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেইসাথে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও আবাদি বিভিন্ন ফসল।’
নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, ‘আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেইট খুলে রাখা হয়েছে।
ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তিস্তা: অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছে তিস্তা নদীর চেহারা। পানি বাড়ার ফলে ভয়াবহ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকা ও সমতলের দিকে বৃহস্পতিবার থেকে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে৷ অনেক জায়গায় ধস নেমেছে৷ তিস্তায় পানি বেড়েছে৷ শুক্রবারও দার্জিলিংয়ে বৃষ্টি হয়েছে৷ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে৷ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারে প্রবল বৃষ্টি হয়েই চলেছে৷ সিকিমেও বৃষ্টি হচ্ছে৷ এর ফলে তিস্তায় পানি অনেকটাই বেড়ে গেচে। তিস্তার পাশে যারা থাকেন তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।তিস্তার চেহারা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তিস্তাবাজার, সেবক, বাসুডুবা, গজলডোবাতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তিস্তায় পানি বাড়ার ফলে বাংলাদেশেও তিস্তা দিয়ে অতিরিক্ত পানি যাবে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অনেক জায়গায় ধস: গত বৃহস্পতিবার থেকেই দার্জিলিংয়ে একাধিক জায়গায় ধস নামে। গত শুক্রবার আরো কয়েকটি জায়গায় ধস নামে। মিরিক, ঘুম, সুকিয়া পোখরি রোডে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। লোয়ার সিটং, দুধিয়া, পানিঘাটা, রোডও ধসের কবলে পড়েছে। কালিম্পংয়ে সিংথাম-রংপো রোডে পাথর এসে পড়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। মেল্লি বাজারের কাছেও ধস নেমেছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক গত মঙ্গলবার খুলেছিল৷ সেখানেও আবার ধস নামলো। ফলে সেখানে অনেক জায়গায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গরুবাথান ও কালিম্পং ১ নম্বর ব্লকে ধস নামতে পারে।
লাভা ও লোলেগাঁও ধসের কবলে পড়তে: ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও অনবরত তিন দিনের বৃষ্টিতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে, ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী জেলার পাঁচ উপজেলার নি¤œা ল প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেইট খুলে দিয়েছে কতৃপক্ষ। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০০ মিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) যা বিপৎসীমার ১৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নি¤œা ল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরা লগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। নদীর তীরবর্তী ও চরা লে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন।
এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৮ থেকে ১০টি চর ও পাশের কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি চর এলাকায় পানি উঠতে পারে বলে জানা গেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অত্র ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।’ নদীগর্ভে থাকা ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, ‘তার ইউনিয়নের ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড একেবারেই প্লাবিত হয়েছে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫০০ মানুষ।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেইট খুলে দেয়া হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তার নি¤œা লের যে সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে ওই সব এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ও ত্রাণ ও সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com