বগুড়ায় এক এসিল্যান্ডের গাড়ির ড্রাইভার নামে-বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।জিরো থেকে হিরো হওয়া এসি ল্যান্ডের ড্রাইভার হলেন শামীম। তিনি পৈতৃক সূত্রে তিনি আধা শতক সম্পত্তির মালিক হলেও দুই বছরেই কামিয়েছেন কোটি টাকা। ৫৫০ টাকা দিন হাজিরার চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন শামীম। একসময় ভ্যান-রিকশা ও লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এই শামীমই এখন পাঁচ তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়ান। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে দুর্নীতির সাম্রাজ্যের অঘোষিত সেনাপতি ড্রাইভার শামীম হোসেন। তার আরেক সহযোগী একই অফিসের নাইটগার্ড এনামুল হক। জমির খারিজ, শ্রেণি পরিবর্তন, অছিয়তনামা দলিলসহ নানা কাজে প্রতিদিন লাখ টাকা ইনকাম করেন ওই দুজন। অভিযোগ রয়েছে, সার্ভেয়ার এবং শিবগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারাও এসিল্যান্ডের নামে ঘুষের টাকা গ্রহণ করে ড্রাইভার ও নাইটগার্ডের হাতে দেন। এরপর বিশেষ চিহ্ন স্বাক্ষর করা ফাইল পাঠানো হয় এসিল্যান্ডের টেবিলে। তাদের মাধ্যমে প্রতিদিন লেনদেন হয় ১০ লাখ টাকা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সম্প্রতি বগুড়া প্রেসক্লাবে শিবগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ডের ড্রাইভার শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে জমি খারিজের নামে টাকা নেয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলনের পর ভূমি অফিসের লাগামহীন দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জানা গেছে, এসিল্যান্ডের গাড়িচালক হিসেবে মাসে ১৪ হাজার ৮৬০ টাকা বেতন পান শামীম। দিন হাজিরা ৫৫০ টাকা মজুরি ২৭ দিনে মাস ধরা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে ভূমি অফিসে নাইটগার্ড চাকরি পান এনামুল হক। তবে রাতে অফিস পাহারায় তাকে দেখা যায় না। তার স্থলে টাকা দিয়ে রাখেন ভাড়া করা গার্ড। কারণ সকাল হলেই এনামুলের হাতে যায় ঘুষের টাকা। অন্যদিকে এসিল্যান্ডকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে নাইটগার্ডের সঙ্গে ধান্দা শুরু করে ড্রাইভার শামীম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা মুরাদপুরের বাসিন্দা শামীম হোসেন পাঁচ বছর আগে লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ছিলেন দিনমজুর। সংসারে অভাবের কারণে একসময় ভ্যান-রিকশাও চালিয়েছেন শামীম। পৈতৃক সূত্রে চারভাই পেয়েছেন দুই শতক জায়গা। ভাগে আধা শতক জায়গার মালিক হন শামীম।পাঁচ বছর আগে তার হাতে আসে জাদুর কাঠি।উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি)গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেই শামীম এখন কোটিপতি। স্থানীয়রা তাকে এসিল্যান্ড নামেই ডাকেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, একটি জমির খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচের জন্য ১১০০ টাকা ভাউচার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দলিল ভেদে ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট। শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল, দেউলি, বুড়িগঞ্জ, ময়দানহাটা, রায়নগর ও সৈয়দপুর এলাকার কয়েকজন জানান, ১১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তহসিলদাররা ঘুষ না পেলে ফাইলে হাত দেয় না। উপজেলা ভূমি অফিসে এসিল্যান্ডের ড্রাইভার আর নাইটগার্ডের হাতে ঘুষ দিলেও কাজ হয়। টাকা ছাড়া ভূমি অফিসে কোনো সেবা মেলেনা। একটি জমির খারিজে ৮ থেকে ১০ হাজার দিতে হয়। সুযোগ বুঝে ২৫ থেকে ৩০ হাজারও নেয়। বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসিল্যান্ডের ড্রাইভারের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে গত ২১ অক্টোবর শিবগঞ্জে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে শামীম হোসেন দাবি করেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি ব্যতীত তার কোনো সম্পত্তি নেই। এ ব্যাপারে, শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তাসনিমুজ্জামান জানান, কোনো দালাল বা মাধ্যমে গিয়ে কেউ প্রতারিত হলে আমি কি দোষী? ড্রাইভার শামীম বা নাইটগার্ডের কাছে তারা যায় কেন? তবে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে বিধি মাফিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।