কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৪’ পেয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুমন দেব নাথ। সফল আত্মকর্মী হিসেবে তিনি সিলেট বিভাগীয় কোটায় এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। সুমন বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভাগাহর গ্রামের জয়ন্ত দেবনাথের ছেলে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সুমনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকসুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, সুমনের বাবার জায়গা-জমি থাকলেও সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন ছিল। অর্থাভাবে ২০১২ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও দমে যাননি সুমন। তার গ্রামের এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ও বড়লেখা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ‘গবাদি-পশু, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ এবং কৃষি বিষয়ক’ ৩ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ২৫ হাজার টাকার যুব ঋণ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আরও কিছু টাকা ধার নিয়ে ২০১৪ সালে ৩০০ মুরগি নিয়ে পোলট্রি খামার গড়ে তুলেন। এরপর লাভ-লোকসানের মধ্য দিয়েই প্রায় ৫ বছর কেটে যায়। এরমধ্যে তাকে মানুষের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে; নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০১৮ সালের দিকে ১ হাজার লেয়ার মুরগির খামার করেন সুমন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে দ্বিতীয় দফায় ৬০ হাজার টাকা ও তৃতীয় দফায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে খামার সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার খামারে ৩১০০ মুরগী আছে। খামারের পাশের জমিতে পুকুর কেটে মাছচাষের পাশাপাশি আগর বাগান, কমলা-লেবু, লটকন, কলা ও সবজি চাষও করেছেন তিনি। তার খামারে ৯ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ২০২২ সালে সুমন বড়লেখায় উপজেলা পর্যায়ে সফল আত্মকর্মীর পুরস্কার পান। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উপজেলার প্রায় ২৫ জন সফল আত্মকর্মী হয়েছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় আত্মকর্মী সুমন দেবনাথ বলেন, পুরস্কার পেয়ে ভালো লাগছে। আসলে পরিশ্রম করলে যে কোনো কাজে সফলতা আসে। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। এজন্য প্রথমে উপজেলা যুব উন্নয়নের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ যুব উন্নয়নের দেয়া প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে আমি খামার শুরু করি। তারা আমাকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ না দিলে হয়তো আজকে এই পুরস্কার পেতাম না। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় আমাকে যারা সাহস দিয়েছেন, উৎসাহ যুগিয়েছেন তাদের সবারও প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।