কেরানীগঞ্জে পরকীয়ার জের ধরে নাটকিয় ভূমিকায় স্বামীকে খুনের রহস্য উদঘাটন করে কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণ থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডে পরিকল্পনাকারীসহ মোট ৪জন আসামী গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ২টি চাকু উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, পরকিয়ায় আসক্ত স্ত্রী আসমা বেগম(৩০), মোহাম্মদ রফিকুল (২২), মোহাম্মদ জিহাদ(২০),মোহাম্মদ শামীন। গতকাল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার জাহাঙ্গির হোসেন। এসময় তার পাশে ছিলেন, কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণ থানার পুলিশ ইনচার্স মাজাহার সুমন। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, স্ত্রীর পরকিয়ার বলি হয়েছেন অটোচালক আলী মোল্লা। মামলার বাদিনী আসমা বেগম ছিলেন নিহত আলী মোল্লার ২য় স্ত্রী। বাদিনীর সহিত আসামী রাকিবের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও দীর্ঘ দেড় বছরের পরকিয়া প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। তারা বিভিন্ন দিন ও সময়ে হোয়াটস এ্যাপে অডিও-ভিডিও কলে কথাবার্তা বলিত। বাদিনী ও আসামী রাকিব হোয়াটস এ্যাপে অডিও-ভিডিও কলে কথা বলার এক সময় স্বামী আলী মোল্লা দেখে ফেলে এবং আসামী রাকিব ও তার স্ত্রীকে গালাগালি করে। রাকিব বাদিনীকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ায় আলী মোল্লা। তাদের পথের কাটা দুর করার জনা ১ মাস আগে আসামী রাকিব ও আসমা আলী মোল্লাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে আসামী রাকিব(২২) হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী আসামী জিহাদ(২০) ও মোঃ শামীন(২১) দ্বয়ের সাথে হত্যার সার্বিক পরিকল্পনা সম্পন্ন করে। তারপর ঘটনার ৩/৪ দিন আগে আসামী রাকিব ও শামীন মিলে বগুড়ার শেরপুর থানাধীন বারদুয়ারী বাজার থেকে ২টি চাকু ক্রয় করে। এমতাবস্থায় আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ নভেম্বর সকালে বগুড়া থেকে রওনা হয়ে বাস যোগে ঢাকায় এসে বিকেলে মামলার বাদিনী আসমার বাড়ীতে গিয়ে দেখা করে। তখন বাদিনী হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য পাচিশ হাজার টাকা আসামী রাকিবকে প্রদান করে। আলী মোল্লা ঐ সময় বাড়ীতে ছিল না। অটোরিক্সা নিয়ে বাহিরে ছিল। পরবর্তীতে আসামীরা টাকা নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর বাজারে অবস্থান করতে থাকে। আলী মোল্লা রাতে বাসায় ফিরলে মামলার বাদিনী কৌশলে হোয়াটস এ্যাপে আসামী রাকিবকে ফোন দিয়ে জানায়, তার স্বামী আলী মোল্লা বাসায় আসছে। আলী মোল্লাকে কৌশলে ফোন দিয়ে বাহিরে ডেকে নিয়ে যেতে বলে এবং আলী মোল্লার মোবাইল নাম্বার আসামী রাকিবকে প্রদান করে। বাদিনীর কথা মতো আসামী রাকিব গত ৬ নভেম্বর সকাল ১১ টায় তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে আলী মোল্লার মোবাইলে ফোন দিয়ে অটোরিক্সা করে হাসনাবাদ নামিয়ে দিতে বললে আলী মোল্লা অটোরিক্সা নিয়ে তাহার বাড়ীর সামনে আসে এবং আসামী তিনজন রাকিব, জিহাদ ও শামীনকে অটোরিক্সায় উঠিয়া প্রথমে হাসনাবাদ গেলে আসামীরা বলে আমরা কদমতলী যাব। তখন আলী মোল্লা হাসনাবাদ হইতে কদমতলী যাওয়ার পথে হত্যার পরিবেশ খুজতে থাকে। হত্যার পরিবেশ না পাওয়ায় আসামীরা পূনরায় জানায় তারা কদমতলী থেকে হাসনাবাদ যাবে। তখন আলী মোল্লা কদমতলী থেকে হাসনাবাদে যাওয়ারর পথে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন নাজিরেরবাগ চন্ডিতলা ময়লায় স্তুপের সামনে পাঁকা রাসÍায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী রাকিব ও জিহাদ দুইজন কুপিয়ে বাদিনীর স্বামী আলী মোল্লাকে মারাতœক রক্তাক্ত জখম করে এবং পার্শ্ববর্তী ঝোপের মধ্যে চাকু দুইটি ফেলে বগুড়া পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার আগে বাদিনীকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত হোয়াটস এ্যাপে জানায় আসামী রাকিব। পরবর্তীতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকায় নিয়া ভর্তি করলে আলী মোল্লা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। দক্ষিণ থানা পুলিশ কৌশল অবলম্বন করে হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতার করে।