পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সদ্য সমাপ্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজা পালনে ভুয়া তালিকা জমা দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কর্মকার ও সম্পাদক পংকজ সাওজালসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ১৮ টি পূজা মন্ডপের নামে বরাদ্দ নিয়ে প্রতিটি মন্ডপ থেকে ৫শ কেজি জি আর চালের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তৎকালীন মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা দাবি করেন। এ ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অলোক চক্রবর্তী সংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, মঠবাড়িয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ সাওজাল এবং ভুয়া মোবাইল নাম্বার ব্যবহারকারী সঙ্গী হিসেবে আরো ৫-৭ জন মিলে বাড়তি পূজা মন্ডপ দেখিয়ে অনেক দিন ধরে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজা মিলে উপজেলার ১০৩ টি মন্ডপের তালিকা দেয় পূজা উদযাপন পরিষদ। এ তালিকা থেকে একাধিক মন্ডপের কোন টাকা দেননি। তাছাড়া চাল সরকারি রেট অনুসারে ৬০ টাকা থাকলেও ৩৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন। স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে কম দামে চাল বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগের একটি অনুলিপি পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কাছেও পাঠানো হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। বড়শিংগা সার্বজনীন শ্রী শ্রী গোবিন্দ ও দুর্গা মন্দিরের সহ-সভাপতি কেশব চন্দ্র রায় জানান, আমাদের এখানে দুর্গা ও জগধাত্রী পূজা হয়নি। আমাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে পূজা উদযাপন কমিটি আত্মসাৎ করেছেন। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কর্মকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ১০৩ টি মন্ডপে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়, এর ভিতরে ৬২টি দুর্গাপূজা ও ৪১ টি জগধাত্রী পূজা। যারা দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজা করেছেন সবাইকে এক হাজার কেজি চালের মূল্য হিসেবে ৩৮ হাজার ১০০ টাকা দেয়া হয়েছে। যারা শুধু একটি পূজা করেছেন তাদেরকে ১৯ হাজার ৫০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। দুই একটি মন্ডপের বাড়তি নাম দিয়ে আমাদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ সাওজাল বলেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপ পরিস্থির আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি সভাপতি ও জয়েন্ট সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করেছে। অভিযোগ সম্পর্কে সদ্য বদলী হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন তালুকদার বলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানবেন। সরোজজমিনে পরিদর্শন করে দুর্গাপূজা ও জগধাত্রী পূজার বরাদ্দ দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূজা উদযাপন কমিটি থেকে আমরা তালিকা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাই তার প্রেক্ষিতে বরাদ্দ হয়ে থাকে। অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।