মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড (এনটিসিএল) এর ফাঁড়িসহ ৮টি বাগানে চা শ্রমিকরা অবশেষে কাজে ফিরেছেন মঙ্গলবার সকাল থেকে। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর গত সোমবার দেওয়া হয়েছে দুই সপ্তাহের মজুরি। জানুয়ারি মাসে বাকি ৪ সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে চা শ্রমিকদের। গত সোমবার ৬ সপ্তাহের মধ্যে দু’সপ্তাহের তলব (মজুরী) পেয়ে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কাজে যোগ দিতে দেখা গেছে চা শ্রমিকদের। সরজমিনে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের ২ নং সেকশনে গিয়ে নারী শ্রমিকদের চা পাতা চয়ন করার দৃশ্য চোখে পড়ে। এসময় চা পাতা চয়নকালে নারী চা শ্রমিক বাসন্তী রাজগড়, ললিতা ভর, মালতি, শ্যামবতীদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, বাবু আমরা বকেয়া মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম, সোমবার আমরা দু’সপ্তাহের তলব (মজুরি) পেয়ে আজ কাজে যোগ দিয়েছি। কাজ পরিদর্শনে থাকা মাধবপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪৯ দিন পর চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে চা বাগানগুলোর অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো কাজের মাধ্যমে কোম্পানির ক্ষতির কিছুটা অংশ পুষিয়ে দেয়ার। তবে কোম্পানি এই কয় মাসে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ আগস্ট থেকে ৬ সপ্তাহ মজুরি না পেয়ে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তারা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদফতর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বকেয়া ৬ সপ্তাহের মজুরি দুই থেকে তিন কিস্তিতে দেওয়া হবে। এরমধ্যে দুই সপ্তাহের মজুরি সোমবার দেওয়া হয়েছে। মজুরি পেয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড (এনটিসিএল) এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শফিকুর রহমান মুন্না বলেন, চা শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হয়েছে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ২০ ডিসেম্বর ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না। বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এদিকে, অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে বলে জানা যায়।