সাতক্ষীরা বিনেরপোতায় ধান গবেষণার জমিতে মাছ চাষ। বর্ষা মৌসুমে গবেষণার জন্য আমন ধানের চারা রোপন করা হয়, সেই ধানের চারা বড় হলে মাছ দিয়ে খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ২০১১ সালে সরকারিভাবে ৫৪.৬৯ একর জমি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের বর্ষা মৌসুমে ওই জমিতে মৎস্য চাষ করা হয়। ধান গবেষণার অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিনেরপোতা এলাকার আওয়ামীলীগ নামধারী কতিপয় নেতা সরকারের নিয়ম নীতি উপেক্ষ করে বর্ষা মৌসুমে ধান গবেষণার জমি মাছ চাষ করার জন্য লীজ দিয়ে সরকারের কোটি টাকা হজম করেছে। রাষ্ট্রের ক্ষতির বিষয় কেউ টু শব্দ করলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হতো। মামলা হামলাসহ পুলিশ হয়রানি অথবা আওয়ামীলীগ দালাল নেতাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ধার দেনা করে লক্ষ লক্ষ টাকা গুনতে হয়েছে। এছাড়া সাবেক প্রতিষ্টান প্রধান বৈজ্ঞানী কর্মকর্তা মামুন আওয়ামী আমলে সাতক্ষীরার ক্ষমতধর ব্যক্তি আত্মীয় পরিচয়ে দাপটের সাথে মন যেভাবে চেয়েছে সেভাবে ধান গবেষণার জমি ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরকার ধান গবেষণার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রয়োজনে একটি ধানগাছের জন্য সরকারের বড় টাকা ব্যয় হয়। আর সেই ধানগাছ খেয়ে মাছ বড় করা হয় এ অভিযোগ স্থানীয়দের। বিনেরপোতাসহ পাশের গ্রামের অনেকে বলেন গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তন হতেই বর্তমান প্রতিষ্ঠান প্রধান ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান, চীফ সাইন্টিফিক অফিসার(সিএসও) রিতিমত বিএপির নেতা তকমা লাগিয়ে প্রায় দেড়শত বিঘার মৎস্য ঘেরর মালিক বনে যান। কেউ কেউ বলেন ড. সাজ্জাদুর রহমান মাছের ভাগ্য নাকি অনেক ভালো, নিজেদের খাওয়ার মাছ, আত্মীয়করণ বাদে দেড় কোটি টাকার উপরে মাছ বিক্রি করেছেন। তবে ঘুরে ফিরে এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ধান গবেষণার জমি মাছ চাষ করতে সরকারের কোন নির্দেশনা আছে কি না। আর যদি নির্দেশনা না থাকে তাহলে কোন ক্ষমতা বলে ধান গবেষণার মত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এভাবে ইচ্ছামত ব্যবহার করেন দেখার কি কেউ নেই। এব্যাপারে সরাসরি কথা হয় সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান, চীফ সাইন্টিফিক অফিসার(সিএসও)। প্রশ্ন করা হয় ধান গবেষণার জমিতে মাছ করার কোন সরকারি নিদেশনা আছে কি না। এমন প্রশ্নে ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান যেন গাছ থেকে পড়েন। ভাবটি এমন বলেন আপনি মাছ কোথায় পেলেন, জানেন না ভারী বর্ষায় ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের সহযোগিতা করেন না জেনে কিছু বলতে যাবেন না। ডিসি স্যার বলেছেন কেউ ঝামেলা করলে আমাকে জানাবেন আমি ব্যবস্থা নেব। মাছ পাহারার চৌকি দেয়ার জন্য টোংঘর ছবি দেখালে উনি রিতিমত কিছুই জানেন না, বলেন ঘর বাঁধা আছে না কি? এলাকার সাধারনের দাবী জাল দিয়ে মাছ ধরে প্রতিদিন ৫/৬ টলি মাছ বিনেরপোতা মাছের আডৎ’এ বিক্রয় করা হয়। এক টলি মাছের মূল্য প্রায় লক্ষ টাকা। তাছাড়া ধানগবেষণার কর্মকর্তা, কর্মচারী মাছ বিক্রয় করা ভিডিও ধারণ খবর জানার পর ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান বলেন সব বিষয় বলবো তবে অফিসে আসেন। এলাকার একাধিক ব্যক্তিদের নিয়ে অফিসে গেলে সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানী কর্মকর্তা মামুন ও ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান নিজেদের ধোয়া তুলসি পাতা হিসেবে জাহির করেন। ড. মামুন বলেন সাতক্ষীরায় তার বড় বড় ক্ষমতাধর আত্মীয় আছে। তিনি ২০১৪ সালে ধানগবেষণার জমিতে ঘাস পরিস্কার করতে কয়েক শত কেজি গিরিষ ব্যবহার করার গল্প বলেন। শেষ রক্ষা হিসেবে ধানের জমি ঘাস পরিস্কার করার জন্য মাছ চাষ শুরু করেন। মাছ চাষের জন্য সরকারি কোন লিখিত বা মৌখিক নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে বলেন মাছ বিক্রিয়ের টাকা সরকারি কোষাঘরে জমা দেয়া হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল ১০ বছরে কত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে এমন প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করেন। মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক ক্ষমতার মসনাদের গল্প বলেন। এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন বিনেরপোতা এলাকার আওয়ামীলীগ নামধারী কতিপয় ব্যক্তি এবং তিন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অসাধু কর্মকর্তা,কর্মচারী যোগসাজসে আওয়ামীগ আমলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ধান গবেষণার প্রায় দেড়শত বিঘা। বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করার জন্য ঘের মালিক জমির মালিকদের বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হিসেবে হারী দেয়। সে হিসেবে ৬ হাজার টাকা বিঘা প্রতি হারী হলে দেড়শত বিঘা জমির হারী হয় ৯ লক্ষ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল শুধু মাত্র ১০ বছরে বিনেরপোতা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আত্মসাত করা হয়েছেরন ৯০ লক্ষ টাকা। অন্য দুই টি সেক্টর পরমাণু কৃষি গবেষণার প্রায় ৭০ বিঘা জমি এবং কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বারি গবেষণার জমিতে ও বর্ষা মৌসুমে মাছ করা হয়। এছাড়া ধান গবেষণার নামে ,বীজ সংরক্ষণ, ধান রোপন, কৃষি কাজে অতিরিক্ত লোক হাজিরা দেখানো,কর্মচারী নিয়োগসহ অসংখ্যা খ্যাত থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ড. মামুনসহ, ২০০৬ সাল থেকে ১১ জন কর্মকর্তা। সুষ্ট তদন্ত হলে থলের বিড়াল বের হবে। এ বিষয় ড.মামুনের কাছে জানতে চাইলে উনি রাগান্বিত হয়ে বলেন আপনি মাছ নিয়ে পড়ে আছে কেন? আপনি কি ভালো কিছু করতে পারেন না। আমার জরুরী কাজ আছে ফ্রি টাইমে কল দিয়েন এ কথা বলে ফোন কল কেটে দেন। ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান’র সেল ফোনে একাধিক বার কল করা হলে তিনি রিসিব করেননি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচাল ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান’র সেল ফোনে বিনেরপোতা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে মাছ চাষের বিষয় কথা হয়, তিনি এ বিষয় দেথবেন বলে আশ্বস্ত করেন। স্থানীয় সাধারণ জনগনের দাবী গত আওয়ামীলীগ আমলে বিনেরপোতা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কোটি কোটি টাকা হরী লুট হয়েছে। কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি, যে কারণে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও দূর্নীতিদমন কমিশন এবিষয় জরুরী ভিত্তিতে সুষ্ট তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন স্থানীয়রা এ দাবী তুলেছেন। উল্লেখ্য, ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়, সাতক্ষীরা ১ আগস্ট ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা শহরতলীর একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর ১২ মে ২০১১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের অদুরে বিনেরপোতা নামক স্থানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছেড়ে দেয়া জায়গার ৫৪.৬৯ একর জমি ব্রি, আঞ্চলিক কার্যালয়, সাতক্ষীরা’র অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে উপকূলীয় খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট জেলার বিস্তীর্ণ লবণাক্ত অঞ্চলের (গাঙ্গেয় টাইডাল প্লাবনভূমি, কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১৩) উপযোগী ধানের জাত ও টেকসই ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনসহ খামারের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এই আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।