মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাবাজপুর চা বাগানের ভূমি ‘ভূমিদস্যুদের’ কবল থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বাগানের চা শ্রমিকরা। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলা চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় ৫ শতাধিক চা শ্রমিক অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবাজপুর চা বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মেঘনাথ নায়েক, চা শ্রমিক দুলনী কর্মকার, রাধামনি নায়েক, কাজল কৃষ্ণ গোয়ালা, রিকমন বাউরি, কৃষ্ণ গোয়ালা, ধনঞ্জয় নায়েক, অভিনন্দন রিকমন, আনন্দ রিকমন, শ্যামরা কর্মকার, কেরামত সরদার, আব্দুল মজিদ, মাসুক মিয়া ও জামাল মিয়া প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বোবারথল এলাকার একটি ভূমিদস্যু চক্র জোরপূর্বক সাবাজপুর চা বাগানের ভূমিতে বসতি গড়ে তুলেছে। ভূমিদস্যু চক্রটি প্রায় বাগানের চা গাছ কেটে নষ্ট করছে। অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বাঁশ কেটে বিক্রি করছে। তারা বাগানের চা শ্রমিকদের কাজে বাধা দিচ্ছে। নানা হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এতে শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বর্তমানে সাবাজপুর বাগানের সীমানা বিরোধ মীমাংসার আপোষ নিষ্পত্তি করতে চাইলে চক্রটি অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বাগানের সম্প্রসারণ (আবাদি) কাজ করতে গেলে তারা শ্রমিকদেরকে ভয়ভীতি ও বাধা প্রদান করছে। ইদানিং দখলকৃত জায়গায় তাদের ঘর নিজেরাই আগুনে পুড়িয়ে শ্রমিক ও পাহারাদার নামে দোষ দিচ্ছে। এমনকি মিথ্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছি। তারা অবিলম্বে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। জানা গেছে, ২০০৫ সালে ‘সাবাজপুর’ চা বাগান মালিকানা গ্রহণ করে স্কয়ার গ্রুপ। ওই বাগানের আয়তন প্রায় ২৮৮৭ একর। ২০০৭ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে চা বাগানের ইজারা নেয়। তখন থেকেই স্কয়ার গ্রুপ সরকারের নির্ধারিত ইজারার শর্ত মেনে ভূমিতে চা চাষ ও চা উৎপাদন করে আসছে। সংশ্লিষ্টরা প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২২ সালে স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্র অবৈধভাবে সাবাজপুর চা বাগানের লিজকৃত প্রায় ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে কয়েকটি ঘর তৈরি করে। এরপর থেকে তারা চা শ্রমিকদের সেখানে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে বাগানের চা পাতা উত্তোলনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ওই ভূমিদস্যু চক্রটি ২০১৬ সালে একইভাবে বাগানের আরেকটি অংশের ভূমি দখলের চেষ্টা চালায়। পরে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আবারো ওই চক্রটি বাগানের ভূমি দখলের চেষ্টা করছে। বাগানের ব্যবস্থাপক নাহিদ ফেরদৌস চৌধুরী জানান, সমস্যা সমাধানে একাধিকবার তারা সার্ভের মাধ্যমে চা বাগানের সীমানা নির্ধারণে চেষ্টা করেছেন। তবে নানা অজুহাতে তা করতে দেয়নি দখলদাররা। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বুধবার বিকেলে বলেন, সাবাজপুর চা বাগানের শ্রমিকরা ভূমি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।