শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভালুকায় শীত থেকে বাঁচতে ফুটপাতই উষ্ণতা খোঁজচ্ছেন নিম্নবিত্তরা কয়রায় ইউনিয়ন পরিষদে বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে গণশুনানি মানিকগঞ্জে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুইজন গ্রেফতার বগুড়ায় জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা জেলা কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন মুন্সীগঞ্জের ইতালী প্রবাসীর নেতৃত্বে ১৮ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাত সিংড়ায় খেজুড় গুড় তৈরীতে ব্যস্ত কারিগররা ধনবাড়ীতে মাসরুমের গুরুত্ব ও উৎপাদন কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ তৃণমূলকে গতিশীল করতে পথ-প্রান্তরে ছুটছেন বিএনপি’র আব্দুল খালেক কয়রায় শিশুদের আনন্দ দানে ও মেধা বিকাশে শিশু মেলা জামালপুর বিএডিসি কর্মকর্তা কর্তৃক মসজিদের নামে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ

সিংড়ায় খেজুড় গুড় তৈরীতে ব্যস্ত কারিগররা

সামাউন আলী (সিংড়া) নাটোর
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন শেরকোল বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ধুলাউড়ি গ্রাম। এ গ্রামের একটি একচালা টিনের বাড়িতে তৈরী হচ্ছে শীতকালের সুস্বাদু খেজুরের গুড়। টাটকা খেজুর রস জাল করে পাটালি, ঝোলা, লালী গুড় সহ তৈরী করছেন নানা রকম মজাদার গুড়। ধুলাউড়ি গ্রামের এই এক চালা টিনের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে আগত ৫-৭ জনের একদল গুড় তৈরীর কারিগর। গত তিন বছর ধরে প্রতি শীত মৌসুমে এ বাড়িতেই গুড় তৈরী করছেন এই কারিগররা। এ কারনে এ বাড়িটি এখন স্থানীয়দের কাছে গুড় তৈরীর কারখানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে ধুলাউড়ি গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রস জাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এসময় কথা হয় সিদ্দিক ও আলতাফ নামের দুই কারিগরের সাথে। তারা জানান, গত কার্তিক মাসে তারা এখানে এসেছেন। থাকবেন ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। দুই কেজি থেকে তিন কেজি গুড় দেওয়ার শর্তে তারা মালিকের গাছ থেকে খেজুর গাছ বর্গা নিয়েছেন। এ বছর তাদের গাছের সংখ্যা প্রায় ২৭০ টি। এখানে তারা প্রতিদিন গুড় উৎপাদন করছেন ৬০- ৭০ কেজি। শীত আর রোদ দুটোই খেজুর রসের জন্য উত্তম সময়। পরিবেশগত দিক থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গুড়ের উৎপাদন বাড়ে। কারিগররা জানান, পাটালি, ঝোলা ও দানা বা লালী গুড় ১৫০- ১৬০ টাকা পাইকারী কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকাররা বেশির ভাগ কারখানা থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যান। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয় এখান থেকেই। তবে খুচরা ও পাইকারি একই দামে বিক্রি করেন তারা। কারিগররা আরো জানান, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৩ টায় গাছ থেকে রসের হাড়ি নামানো শুরু হয়। এর পর সকাল থেকে টানা চার, পাঁচ ঘন্টা জাল দিতে হয়। এভাবে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে শুরু হয় পাটালি তৈরীর কাজ। বিকালে আবারও ব্যস্ত থাকতে হয় গাছে চাঁচ দেওয়া ও হাঁড়ি লাগানোর কাজে। সব মিলে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাদের। পাঁচ মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হয় প্রত্যেক কারিগরের। এলাকায় বিভিন্ন পেশার কাজ করলেও শীতের এই পাঁচ মাস এলাকার বাহিরে এসে গুড় তৈরীর কাজ করে বাড়তি আয় করেন এই কারিগররা। ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক মখলেছুর জানান, আমরা আগে খেজুর গাছের তেমন যত্নবুঝিনি। অযত্ন অবহেলায় গাছ গুলো পড়েই থাকতো। আমার পুকুর পাড়ের ১০ টি গাছ ওদের কাছে বর্গা দিয়েছি। বিনা পরিশ্রমে ১০টি গাছ থেকে ৩০ কেজি গুড় পাবো। তাতে আমার সারা বছর গুড়ের চাহিদা পূরণ হবে। সিংড়া বাজারে গুড় ব্যবসায়ি আনিছুর, নরেন ও মাসুদ আলী জানান, শীত মৌসুমে ধুলাউড়ি, পাটকোল, নাগরকান্দী, তেমুখ নওগাঁ সহ উপজেলার বিভিন্ন কারখানা থেকে খেজুর গুড় কিনে তারা বাজারে বিক্রি করছেন। গ্রামের এসব কারখানার গুড় টাটকা ও সুস্বাদু বলে বাজারে অন্য গুড়ের চেয়ে এসব গুড়ের চাহিদা বেশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, সিংড়া উপজেলায় এবছর ৫৮ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। সাধারণত কৃষকরা পারিবারিকভাবেই শীতকালে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করেন। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছীরা আসছেন। তারা টিম ওয়ার্ক করে গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছেন। আমরা স্বাস্থ্য সম্মত গুড় তৈরীর জন্য ওই সব পারিবারিক কারখানা গুলোতে মনিটরিং করছি। খেজুর গাছ কৃষকদের বাড়তি আয়ের একটি উৎস। এগাছ থেকে শুধু গুড়ই পাওয়া যায় তা নয়। এগাছের পাতা শুকিয়ে নকশাদার পাটি, হাত ব্যাগ সহ নানা রকম কারুকাজ খচিত পণ্য তৈরী করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে যাতে অন্তত একটি করে খেজুর গাছ থাকে সে জন্য কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com