সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কৃষকের আশার আলো কালীগঞ্জে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষে বাড়ছে আগ্রহ কমলগঞ্জে গরিব ছাত্রছাত্রীদের মেধা বৃত্তি প্রদান রূপসী শেরপুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জলঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ নগরকান্দায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৫ পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিল-ডা. মাজহার গত ১৫ বছর গণমাধ্যম সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে পারে নি-বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি শহীদ নূর আলী কলেজে নবীনবরণ উৎসব উলিপুরে সাদপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজে পিঠা উৎসব : তিন লক্ষাধিক টাকার পিঠা বিক্রি

ঘুমের ঔষধ খাইয়েও ঘরে রাখা যায়নি শহিদ রাব্বিকে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

পুলিশের তাজা বুলেট আমার সতেরো বছরের বাজানডারে কাইড়া নিছে। আমি তো শহিদের মা হতে চাই নাই। আন্দোলনে যাওনের আগে বাবাডা শখের হাত ঘড়ি,আংটি আর চামড়ার জুতা খুইল্যা গেছে। বাথরুমের স্যান্ডেল পইরা বাইর হইছে। আল্লাহ আমারে এমন শাস্তি দিলো কেন। আমার রাব্বিরে আইন্যা দেন আপনারা।
এ আহাজারি সায়েদাবাদের করাতিটোলা এলাকার গণ অভ্যুত্থানে নিহত ঈসমাইল হোসেন রাব্বির মা আসমা বেগমের। ভ্যানচালক মো: মিরাজ (৫৮) ও তার মা তাদের একমাত্র পুত্রসন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। ঘরের ভেতরে উপস্থিত সবার চোখে পানি। রাব্বির মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছিল পরিবেশ। মেঝেতে বসা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগা মো: মিরাজও ফুপিয়ে কাঁদছিল।
আসমা বেগম (৪৮) রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (বাসস) কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জীবনে কোন অন্যায় কাজ করি নাই, আল্লাহর গুনাহ্র খাতায়ও মাফ। তারপরও এমন শোক আমি কেমনে বইবো। কলিজা ছিঁড়া বাজানডা যে চইলা গেছে। তিনি বলেন, রাব্বিরে অনেক বুঝাইলাম মাথায়-গায়ে হাত বুলাইয়া, তুই মিছিলে যাস না রে বাবা। কত কষ্ট করি দেহস, আমার কষ্ট কি তোর লাগে না বাবা? তুই কোন অভাবে যাবি বাবা ? কান্দন দেইখ্যা কইল, আম্মু তুমি কাইন্দ না। মুগ্ধ আর আবু সাঈদ শহিদ হয়েছে তাদের রক্তের মূল্য নাই? বলছি, তোরে ছাড়া বাঁচুম নারে বাজান।
আমার দুই ভাইও বুঝাইছে; বলছে, কালকে সারাদেশে বিশ্বযুদ্ধ লাগবো। তুমি পরিবারের এক ছেলে, আন্দোলনে যাইও না। সবাই অনুরোধ করলাম, খালি চুপ কইর‌্যা সবার কথা শুনল। মনে করল না ওর আম্মু যে পাগল হইয়া যাইবো। যেই জন্য ঘুমের ওষুধ খাওয়াইলাম কোনোটাতে কোন কাম হইলো না।’
তিনি বলেন, মেয়েরা বলছে পোলারে আন্দোলনে যাইতে দিও না। ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে বাসায় ঘুম পাড়াইয়া রাখো। বলছি যেমন কইরা হোক আমার পোলারে সামলাইয়া রাখুম। সামলাইয়া রাখতে পারি নাই। ঘুমাইতে পারি না। মনে হয় ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, দেহি আমারে ডাকে, কয় আম্মু আমারে ভাত দাও। ডাক দেই, কোথাও ওরে খুঁজে পাই না।
মিতু আক্তার (২৮) ও মিম আক্তার (২৪)-এই দুই বোনের ছোট ঈসমাইল হোসেন রাব্বি শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
মিম আক্তার বলেন, গত ১৫ ও ১৬ জুলাই রাব্বি শরীয়তপুরে আন্দোলনে গিয়েছিল । এটা জানার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ওকে আমরা ১৭ জুলাই ঢাকায় নিয়ে আসি। আসার পর একদিনও বাসায় থাকেনি। শরীয়তপুরে আন্দোলনে গিয়েছে শুনে জরুরিভাবে ঢাকায় এনেও লাভ হলো না।
তিনি বলেন, যাওয়ার আগের রাতে আম্মু, আমি ও বোনের সাথে কথা হয় রাব্বির। আমি বলি,তুই আর যাস না ভাই, এবার গেলে আর কাউরে ছাড়বো না। বুলেট মারতেছে তুই কিন্তু টিকতে পারবি না। আমার কথা শুনে রাব্বি বলে, ‘তোমরা শুধু তোমাদের কথা ভাবছো। ছাত্র-জনতার উপরে যেসব জুলুম হচ্ছে তা সহ্য করা যায় না। এই জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে যদি শহিদের মৃত্যু হয়, হোক। আমি শহিদ হবো।’
রাব্বি আরো বলেছে, ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এবার কোন দল বের হয় নাই, বের হইছে মানুষ। এখানে সবাই মানুষ। এবার মানুষ বাইর হইছে এইবার হাসিনার রক্ষা নাই।
রাব্বি সবসময়ই ছিলেন প্রতিবাদী। সে প্রসঙ্গে মিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কোন মিছিল হলে তাতে যোগ দিতো রাব্বি। সময়টা ছিল ২০১৮ সাল। রাব্বি তখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র। নিজেই শ্লোগান বানালো। ‘বাপের খাই বাপের পরি, সেই দেশে কেন রাস্তায় মরি।’ একটা কাগজে এই শ্লোগান লিখে তা নিয়ে বের হয়ে যেতো।
মিম আরো বলেন, ২১ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে বুকে তার রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। আমি যখন জানতে চাইলাম বলল, পুলিশ আমাকে খুব কাছে থেকে রাবার বুলেট ছুেঁড়ছে। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। প্রথমে বুলেট খাইয়া টের পাই নাই। রক্ত বের হচ্ছে দেখে নিজেই বুলেট বের করে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করেছি। সেদিন রাব্বি তুলো দিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে এসেছিল। শহিদ হওয়ার আগের রাতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, গত ৩ আগস্ট রাত্রে হাতে দুইটা ঘুমের ঔষধ দিয়ে বলছি খা। বললাম, তুই ঘুমালে আর আন্দোলনে যাবি না। ও হাসে, কিছু বলে না। ঔষধ খেতে গিয়ে বলল, ‘আমারে এইডা খেতে দিলি?’ ও ঘুমের ঔষধ খাইয়াও এক ফোঁটাও ঘুমায় নাই। আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিতে গেলাম। বলল, মাথার চুলে হাত দিস না। আমার মাথা ব্যাথা করছে।
মিম ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে বাসসকে বলেন, সেদিন সবাই সতর্ক হয়ে আছি। ভোরের দিকে বাথরুমে গেল, ওযু করল, নামাজ পড়ল। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ল। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ওকে দেখলাম বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। সারারাত ঘুমায় নাই, ভাবলাম ঘুমালে ও আর আন্দোলনে যাবে না। রাব্বির মোবাইল বন্ধ করে দিলাম, যাতে কেউ কল দিয়ে ওর ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটায়। আমি ও আমার আমার মা আরবী পড়াতে বাসার বাইরে চলে গেলাম। সব মিলিয়ে ঘন্টাখানেক হবে, এর মধ্যে আমরা বাসায় ফিরে দেখি রাব্বি নাই। দরজার একপাশ দিয়ে সিমেন্টের আস্তরণ ভাঙ্গা। ভেতর থেকে বাইরের দরজার লক খুলে বের হয়ে গেছে। রাস্তায় আব্ব¦ুর সাথে দেখা হয়েছিল। আব্বুর ডাকে কোন কথা বলে নাই। আসার পরে ওকে না দেখে চিন্তিত হয়ে ওর মোবাইলে কয়েকবার কল দিলাম। রিং হয়েছে, কিন্তু ও মোবাইল ধরল না। ফিরে আসার অপেক্ষা করে রাত বাড়তেই আমি, মা ও বোন ওর খোঁজে বের হই, অনেক জায়গায় খুঁজি। মিম বলেন, সেদিন রাত তিনটা পর্যন্ত খুঁজলাম। ওই সময় চাঁনখারপুল থানার সামনে গিয়ে দেখি লাশ আর লাশ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com