সমুদ্রে চীনের প্রভাব ঠেকাতে যৌথভাবে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জাপান ও ইন্দোনেশিয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে এবার যৌথ উদ্যগে সম্মত হয়েছে দেশ দুটি। এ উদ্যেগকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে নিজেদের প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করার প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা। বলা হচ্ছে- চুক্তিটি সম্পাদিত হলে এটি জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর মধ্যে যুগান্তকারী সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করবে। এ খবর দিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এতে বলা হয়, শনিবার জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর সঙ্গে আলোচনার সময় প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বেশ জোর দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, যুদ্ধজাহাজের নকশা জাপানের মেরিটাইম সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স কর্তৃক প্রণয়ন করা হবে। এতে সমুদ্রে ইন্দোনেশিয়ার ভিত মজবুত হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ বেইজিংয়ের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধের মুখোমুখি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে টোকিওর সম্পর্ক মজবুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
টোকিওর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজের চীন বিষয়ক বিভাগের পরিচালক মাসায়ুকি মাসুদা বলেছেন, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কৌশল অনুযায়ী- চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তির বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়াতে একটি শক্তিশালী জোট গঠনের চেষ্টা করছে জাপান। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোটকে শক্তিশালী করতে জাপান বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে। দিস উইক ইন এশিয়াকে মাসুদা বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সমুদ্রে নিজেদের প্রকল্প বৃদ্ধি টোকিওর নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করার কৌশল।
জাপান এবং ইন্দোনেশিয়া; উভয়েরই চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের সবচেয়ে দূরবর্তী নাটুনা দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে জাকার্তার। অন্যদিকে পূর্ব চীন সাগরের দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে টোকিওর বিরোধ চলছে। বর্তমানে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই। তবে চীন তা ভালো চোখে দেখে না। স্থানীয়ভাবে সেনকাকুস নামের ওই দ্বীপের ওপর চীনের কড়া নজর রয়েছে। এ নিয়ে চীন ও জাপানের বিরোধ মাঝে মাঝে আঞ্চলিক উত্তেজনায় গড়ায়।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাজাফ্রি সামাসোয়েদিনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল নাকাতানি। সেখানে তারা যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। জাপানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের সম্পর্ক জোরালো করা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখে করেছেন জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট রয়েছে যা দুই দেশের প্রতিরক্ষার জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
যুদ্ধজাহাজ প্রকল্প নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই আলোচনা শুরু করেছে এ দুই দেশ। তবে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর অধীনে এ আলোচনায় কিছুটা ভাটা পড়ে। কারণ তিনি দেশটির রাজধানী জাকার্তা থেকে নুসান্তারায় স্থানান্তরের দিকে বেশি মনযোগী হয়েছিলেন। এছাড়া যুদ্ধজাহাজ রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞার কবলে ছিল জাপান। তবে এবার দুই দেশের সম্মতিতে এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
জাপানের শিপইয়ার্ডে নির্মিত হবে নতুন মডেলের যুদ্ধজাহাজ। যা ব্যবহার করে সমুদ্রে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে জাপান ও ইন্দোনেশিয়া।